বারবার অভিযোগ জানিয়েও কোন লাভ হয়নি, চিকিৎসা ও যান চলাচল ব্যাহত—আন্দোলনের হুমকি দিল ৪০০ পরিবার।
খোয়াই প্রতিনিধি: ত্রিপুরার খোয়াই মহকুমার অন্তর্গত গৌরনগর এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের ভোগান্তির চিত্র উঠে এলো আবারও। অব্যাহত অবহেলা, নজরদারির অভাব এবং প্রশাসনিক উদাসীনতার কারণে গৌরনগর এলাকার প্রায় ২৫ বছরের পুরনো একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি আজও পড়ে রয়েছে সম্পূর্ণ বেহাল অবস্থায়। বর্ষা এলেই এই রাস্তা কাঁদামাখা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। শুকনো সময়েও ধুলো আর খোঁড়াখুঁড়ির কারণে এই রাস্তায় চলাচল কার্যত দুর্বিষহ হয়ে দাঁড়ায়।
এলাকাবাসীদের অভিযোগ, দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে এই রাস্তাটি মেরামতের কোন উদ্যোগ প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হয়নি। অথচ এই রাস্তার উপর নির্ভরশীল প্রায় ৪০০ পরিবারের দৈনন্দিন যাতায়াত, স্কুলগামী শিশুদের যাত্রা, রোগীদের হাসপাতাল পৌঁছানোর মত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। গাড়ি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ায়, বিশেষ করে রাতের বেলায় ও জরুরি অবস্থায়, যেকোনো বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থেকেই যায়।
মঙ্গলবার, সংবাদ মাধ্যম ঘটনাস্থলে পৌঁছালে গৌরনগর এলাকার বহু মানুষ একত্রিত হয়ে তাদের ক্ষোভ উগরে দেন। তাঁরা জানান, স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে খোয়াই জেলার বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরে একাধিকবার এই রাস্তাটি সংস্কারের দাবিতে আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু সবকিছুই যেন আশ্বাসে সীমাবদ্ধ থেকে গেছে—কোন বাস্তব পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।
একজন ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দা বলেন,
“একজন রোগী অসুস্থ হয়ে পড়লে, হাসপাতালে নিয়ে যেতে আমাদের দুঃস্বপ্নের মত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। কিছুদিন আগে এক বৃদ্ধ অসুস্থ হলে অ্যাম্বুলেন্স গ্রামে ঢুকতে পারেনি। আমরা খাটিয়া করে নিয়ে গেছি। এটা কি ২০২৫ সালে ঘটে যাওয়া কথা?”
অন্য এক মা জানান,
“আমার ছেলে স্কুলে যেতে গেলে প্রতিদিন জুতো ও প্যান্ট কাদায় ভিজে যায়। রাস্তায় হাঁটার উপায় নেই। পিচের কোন অস্তিত্বই নেই এখানে।”
এলাকাবাসীরা আরও বলেন, প্রায় প্রতিটি বর্ষা মৌসুমেই তারা পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটান। রাস্তায় সামান্য বৃষ্টিতে জল জমে থাকে দিনের পর দিন। জল নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থাও নেই। অথচ এই রাস্তা দিয়ে বাজার, হাসপাতাল, স্কুলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব স্থানে যাতায়াত করতে হয়।
স্থানীয় এক প্রবীণ নাগরিক বলেন,
“প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন—আমরা কি ত্রিপুরার নাগরিক নই? আমাদের করের টাকা কোথায় যাচ্ছে? কেন এই অবহেলা?”
গৌরনগরবাসীরা এবার আর শুধু আশ্বাসে বিশ্বাস রাখতে রাজি নন। তাঁরা সংবাদ মাধ্যমকে জানান, যদি খুব শীঘ্রই রাস্তার সংস্কারের কাজ শুরু না হয়, তবে তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনে যাবেন এবং রাস্তা অবরোধসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক প্রতিবাদে নামবেন।
তাঁরা স্পষ্ট জানিয়েছেন,
“আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। এবার আর চুপ থাকবো না। মিডিয়ার মাধ্যমে রাজ্য সরকার ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি—এই রাস্তাটি অনতিবিলম্বে সংস্কার করা হোক, না হলে বৃহত্তর গণআন্দোলন অনিবার্য।”
এখনও পর্যন্ত প্রশাসনের তরফে এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এলাকাবাসীর দাবির ভিত্তিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি প্রাথমিক রিপোর্ট তৈরি করা হচ্ছে। যদিও কবে সংস্কার কাজ শুরু হবে, সে বিষয়ে কোন নিশ্চিত তথ্য নেই।
গৌরনগর এলাকার এই দীর্ঘদিনের সমস্যা যেন এক প্রতিচ্ছবি হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজ্যের গ্রামীণ রাস্তাঘাট অব্যবস্থাপনার। উন্নয়নের কথা বললেও বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটছে না বহু এলাকায়। গৌরনগরবাসীর ন্যায্য দাবির প্রতি দ্রুত সাড়া দেওয়া উচিত সংশ্লিষ্ট দপ্তরের, নাহলে সরকার ও প্রশাসনের উপর জনরোষ ক্রমেই বৃদ্ধি পাবে।








