স্কুবা ডাইভিংয়ের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় জুবিন গার্গের মৃত্যুস্থল এখন গুগল ম্যাপে ‘Zubeen Garg Island’ নামে পরিচিত — চলছে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত, শোকস্তব্ধ অসম ও সংগীত জগত।
নিউজ ডেস্ক, ৩ অক্টোবর ২০২৫ঃ অসমের সাংস্কৃতিক প্রতীক ও কিংবদন্তি গায়ক জুবিন গার্গের আকস্মিক ও মর্মান্তিক মৃত্যু যেমন গোটা জাতিকে স্তব্ধ করে দিয়েছে, ঠিক তেমনই তাঁর স্মৃতিকে অমর করে রাখতে এক অনন্য আবেগঘন পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে গুগল ম্যাপে। সম্প্রতি, সিঙ্গাপুরের সেই দ্বীপটি — যেখানে স্কুবা ডাইভিংয়ের সময় তাঁর মৃত্যু হয়েছিল — এখন গুগল ম্যাপে ‘Zubeen Garg Island’ নামে চিহ্নিত হয়েছে।

এই পরিবর্তনটি এসেছে এমন একটি সময়ে, যখন জুবিন গার্গের মৃত্যু নিয়ে সিঙ্গাপুর ও ভারতের মধ্যে যৌথ তদন্ত চলছে। গুগল ম্যাপে এই নামকরণ যেন হয়ে উঠেছে এক বিশাল আবেগের বহিঃপ্রকাশ, যেখানে শুধুমাত্র অসম নয়, বরং সারা বিশ্বের ভক্তরা তাঁকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন।
৫২ বছর বয়সী জনপ্রিয় গায়ক জুবিন গার্গ গত ১৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে ‘নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া ফেস্টিভাল’-এ অংশ নিতে গিয়েছিলেন। উৎসব চলাকালীন তিনি সেন্ট জনস দ্বীপে ইয়ট ভ্রমণের সময় স্কুবা ডাইভিং করতে গিয়ে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হন। স্থানীয় সংবাদসূত্র অনুযায়ী, পানির নিচে অক্সিজেন সংক্রান্ত জটিলতার কারণে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও শেষ রক্ষা হয়নি।
এই দুর্ঘটনা কেবলমাত্র অসম নয়, বরং গোটা ভারতের সংগীত জগতকেই গভীর শোকের সাগরে ভাসিয়ে দেয়। তাঁর মৃত্যুর পর দেশজুড়ে শুরু হয় প্রতিবাদ, দোষীদের গ্রেফতার ও প্রকৃত সত্য উদঘাটনের দাবিতে আন্দোলন।
এই ঘটনাকে ঘিরে ভারত ও সিঙ্গাপুর দুই দেশেই তদন্ত শুরু হয়েছে। সিঙ্গাপুর পুলিশ ইতোমধ্যে জুবিন গার্গের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ভারতীয় হাইকমিশনের হাতে তুলে দিয়েছে, যাতে মৃত্যুর কারণ সংক্রান্ত প্রাথমিক তথ্যও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এদিকে, অসম পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (CID) ইতোমধ্যেই জুবিন গার্গের সহশিল্পী শেখর জ্যোতি গোস্বামী ও সহগায়িকা অমৃতপ্রভা মহান্তকে গ্রেফতার করেছে। এই গ্রেফতারের ফলে মামলায় এখন পর্যন্ত মোট চারজনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ জারি রয়েছে এবং তদন্তের স্বার্থে কিছু ভিডিও বা ছবি জনসমক্ষে প্রকাশ না করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
এমন সময়ে, যখন গোটা দেশ জুবিন গার্গের মৃত্যুতে শোকাহত, ঠিক তখনই দেখা যায় গুগল ম্যাপে এক বিস্ময়কর পরিবর্তন। সেন্ট জনস আইল্যান্ডের সেই নির্দিষ্ট অংশ যেখানে জুবিন মারা যান, সেটি এখন ‘Zubeen Garg Island’ নামে আবির্ভূত হয়েছে গুগলে।
বিশ্বজুড়ে তাঁর ভক্তরা এই আবেগঘন মুহূর্তের ছবি স্ক্রিনশট করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিচ্ছেন। কেউ বলছেন, “জুবিন দা চিরকাল আমাদের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন”, আবার কেউ বলছেন, “এই দ্বীপ যেন হয়ে উঠুক জুবিনের স্মৃতির চিরন্তন মন্দির।”
জুবিন গার্গ শুধু একজন কণ্ঠশিল্পীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন অসমিয়া সংস্কৃতি, সাহিত্য ও সামাজিক জাগরণের এক অবিচ্ছেদ্য প্রতীক। তাঁর জনপ্রিয় গান ‘যা বেয়া’, ‘দিল তু হি বতা’, কিংবা ‘মায়া’ আজও কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে গাঁথা। অসম থেকে শুরু করে মুম্বাই পর্যন্ত, তাঁর শিল্পীসত্তা ছড়িয়ে পড়েছিল সর্বত্র।
তাঁর আকস্মিক প্রস্থান যেমন এক অপূরণীয় ক্ষতি, তেমনি গুগল ম্যাপের এই ‘Zubeen Garg Island’ নামকরণ যেন তাঁর প্রতি এক নিঃশব্দ শ্রদ্ধাঞ্জলি, যা স্মৃতির পাতায় চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।
জুবিন গার্গ নেই, কিন্তু তিনি আছেন— কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে, কণ্ঠে, আর এখন গুগল ম্যাপেও। ‘Zubeen Garg Island’ নামটি যেন এক নতুন ঠিকানা, যেখানে প্রতিটি ঢেউ বয়ে নিয়ে যায় এক শিল্পীর চিরন্তন স্মৃতি।








