
ত্রিপুরাঃ ত্রিপুরার রাজনীতিতে ফের উত্তেজনা! ছুটির দিনে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ না হওয়াকে কেন্দ্র করে তিপ্রা মথা দলের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। দলের সুপ্রিমো তথা প্রাক্তন মহারাজা প্রদ্যেৎ বিক্রম মানিক্য দেববর্মা নিজে উপস্থিত ছিলেন গোমতী জেলার জেলা শাসকের আবাসে, যেখানে তিনি তড়িৎ কান্তি চাকমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রশাসনিক কারণে জেলা শাসক সেই সময় দেখা না করায় বেজায় চটে যান প্রদ্যেৎ বাবু।

এই ঘটনায় ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আগরতলায় ফিরে গিয়ে তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন এবং গোটা ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে আশ্বস্ত করেন, রাজ্যের প্রতিটি মানুষের সম্মান রক্ষা করাই সরকারের অগ্রাধিকার, এবং এই ঘটনার শান্তিপূর্ণ সমাধান খোঁজার আশ্বাসও দেন তিনি। তবে মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস যথেষ্ট মনে না হওয়ায়, প্রদ্যেৎ বিক্রম তাঁর যুব সংগঠন YTF-কে মাঠে নামার নির্দেশ দেন এবং আন্দোলনের ঘোষণা করেন।
সেই মোতাবেক সোমবার সকাল দশটায় গোমতী জেলার জেলা শাসকের অফিসের সামনে শুরু হয় বিক্ষোভ। প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে শত শত তিপ্রা মথার কর্মী, যুব সংগঠনের সদস্য ও সমর্থকরা জমায়েত হন জেলা প্রশাসনিক ভবনের সামনে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যখন আন্দোলনকারীরা জেলা শাসকের অফিসের সামনে থাকা পুলিশ ব্যারিকেড ভেঙে দেয়। যদিও পুলিশ মোতায়েন ছিল বিপুল সংখ্যায়—গোমতী জেলার পুলিশ সুপার নমিত পাঠক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৌভিক দে, মহকুমার পুলিশ অফিসার নির্মাণ দাস সহ এআইজিপি, টিএসআর, সিআরপিএফ, ও অন্যান্য বাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও—তারা কার্যত নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে বলে অভিযোগ।

এরই মধ্যে আন্দোলনকারীদের ১০ জনের একটি প্রতিনিধি দল পুলিশি উপস্থিতিতেই জেলা শাসকের কার্যালয়ের প্রধান গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এরপর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের অন্যান্য প্রশাসনিক কার্যালয়ে। কঁকড়াবন সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিকের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার পর পরই কিল্লা সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিকের দপ্তরেও একই ঘটনা ঘটে।
বিক্ষোভ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন তিপ্রা মথার বিধায়ক সঞ্জয় মানিক জমাতিয়া, পাঠান জমাতিয়া সহ এমডিসি সদস্য ডলি রিয়াং ও যুব সংগঠনের রাজ্য ও জেলা নেতৃত্ব। তাঁরা সাফ জানিয়ে দেন, গোমতী জেলার জেলা শাসক তড়িৎ কান্তি চাকমাকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে। অন্যথায় তাঁরা রাজ্যজুড়ে আরও বৃহত্তর ও তীব্রতর আন্দোলনের পথে হাঁটবেন।
এদিকে, জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে গোমতী জেলার পুলিশ সুপার নমিত পাঠক জানান, “শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন হয়েছে, কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। প্রশাসন সর্বোচ্চ ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা বজায় রেখেছে।”
অন্যদিকে তিপ্রা মথার এক নারী নেত্রী বলেন, “আজকের দিনে গোমতী জেলা শাসক অফিসে ছিলেন না। তাহলে প্রশ্ন উঠছে—জেলাশাসক কি ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের এড়িয়ে চলছেন?”
এই পরিস্থিতিতে গোমতী জেলার প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক আবহে চরম উত্তেজনা ছড়িয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস কার্যকরী হবে তো? নাকি এই ঘটনা রাজ্যে আরও এক দফা আন্দোলনের ঢেউ তুলবে?