
২৮টি বাস বিপর্যস্ত, চালক-শ্রমিকরা বলছেন “অটোদের দাপটে বাঁচা যাচ্ছে না”
তেলিয়ামুড়া, ত্রিপুরা | প্রতিবেদক: মৃণময় রায়ঃ ত্রিপুরার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুট তেলিয়ামুড়া-আগরতলা সড়কে আজ যেন চলাচলের চাকা কার্যত থেমে গেছে। কারণ, একদিকে বাস পরিষেবা কার্যত অচল, অন্যদিকে ইলেকট্রিক ও সিএনজি চালিত অটো রিকশার দাপটে ক্ষুব্ধ বাস মালিক ও চালক সংগঠন বিক্ষোভে নেমেছে। দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা সমস্যা অবশেষে এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
তেলিয়ামুড়া থেকে আগরতলা পর্যন্ত চলাচলরত প্রায় ২৮টি বাস বর্তমানে প্রায় পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে। বাসচালকদের অভিযোগ, ইলেকট্রিক এবং সিএনজি চালিত অটো গাড়িগুলি রোজ ‘অনিয়ন্ত্রিত ট্রিপ’ দিচ্ছে, যার ফলে বাসে যাত্রী উঠে না। তেলিয়ামুড়ার একটি বাস স্ট্যান্ডে কর্মরত এক চালক বলেন—
“আমরা দিনের পর দিন লোকসান গুনছি। অটোর কোনো নির্দিষ্ট রুট নেই, কোনো নিয়ম নেই। তারা যখন খুশি যেখানে খুশি যাত্রী তুলছে। আর প্রশাসন যেন চোখ বুজে আছে!”
বাস শ্রমিকদের এই অভিযোগে সমর্থন জানিয়েছে ম্যাক্স গাড়ির চালকরাও। তারাও বলছেন, সিএনজি ও ইলেকট্রিক অটোর দাপটে পরিবহন খাত এখন একেবারে অনিয়ন্ত্রিত এবং অসম প্রতিযোগিতার মুখে।
সোমবার সকাল থেকে ধর্মঘট শুরু হলেও আজ মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনেও কোনও সমাধানের লক্ষণ নেই। ফলে যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। তেলিয়ামুড়ার বিভিন্ন স্ট্যান্ড এলাকায় ভোর থেকেই ভিড় জমতে থাকে যাত্রীদের। কিন্তু বাস বা ম্যাক্স গাড়ি না থাকায় সবাইকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক চিত্রটি দেখা যায় আজ সকাল থেকেই। তেলিয়ামুড়ার স্ট্যান্ড এলাকাগুলিতে বাস ও ম্যাক্স চালকরা যৌথভাবে অটো গাড়ি আটকে যাত্রী নামিয়ে দিচ্ছেন। কিছু কিছু জায়গায় অটোর সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ও বচসার ঘটনাও ঘটেছে।
সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছেন অসুস্থ রোগীরা। আজ সকালে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন রোগী চিকিৎসার জন্য আগরতলা যেতে চেয়ে ব্যর্থ হন। একজন রোগীর আত্মীয় জানান—
“আমার মা হৃদরোগী। সকাল ৮টার অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল জিবি হাসপাতালে। কিন্তু কোনো গাড়ি না পেয়ে বাধ্য হয়ে ফিরে আসতে হলো।”
একদিকে বাস-চালক ও শ্রমিকদের ক্ষোভ, অন্যদিকে যাত্রীদের অসহায়তা—এই দুইয়ের মাঝে যেন কেউ নেই সমাধান দিতে। স্থানীয় একজন প্রবীণ নাগরিক বলেন,
“অটোও চলুক, বাসও চলুক—দুজনেই তো আমাদের পরিষেবা দেন। কিন্তু প্রশাসন যদি ন্যায্য নিয়ন্ত্রণ না করে, তাহলে সমস্যার সমাধান হবে না।”
ঘটনার দুই দিন অতিক্রান্ত হলেও ত্রিপুরা রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কোনও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। না আছে কোনো আলোচনার উদ্যোগ, না আছে পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোনো পরিকল্পনা। ফলে পরিস্থিতি দিন দিন আরও জটিল আকার নিচ্ছে।
তেলিয়ামুড়া-আগরতলা সড়কে যা শুরু হয়েছে তা শুধু এক রুটের সমস্যা নয়, এটি ত্রিপুরার সামগ্রিক পরিবহন ব্যবস্থার এক উদ্বেগজনক চিত্র। যেখানে নীতির অভাব, নিয়ন্ত্রণহীন প্রতিযোগিতা, এবং প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা—সব একসঙ্গে পরিবহণ ব্যবস্থার মেরুদণ্ড ভেঙে দিচ্ছে।
সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা, চিকিৎসা, শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে এই পরিস্থিতি। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন আদৌ কোনো দায়িত্ব নিয়ে এই সংকট নিরসনের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয় কি না।