
লালটিলা, খোয়াই ত্রিপুরা | প্রতিবেদক: কালিদাস ভৌমিকঃ ত্রিপুরার লালটিলা এলাকার মোদক ইটভাটায় আজ সকালে ঘটে গেল এক রহস্যজনক ঘটনা, যা ঘিরে গোটা এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে চাঞ্চল্য এবং উদ্বেগ। স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা যায়, ইটভাটার একটি ঘরের ভেতর থেকে এক মহিলার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মৃতার নাম মঞ্জু মুন্ডা (৩৭), স্বামী সঞ্জিরা মুন্ডা। তিনি ধলা বিলের মুন্ডা বস্তির বাসিন্দা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সোমবার সকাল ৯টার দিকে ইটভাটার এক শ্রমিক ওই ঘরের দরজা খোলা দেখে ভিতরে ঢুকতেই দেখতে পান মঞ্জু মুন্ডার নিথর দেহ। সঙ্গে সঙ্গে তিনি স্থানীয়দের খবর দেন এবং পরে খবর যায় পুলিশে। খবর পেয়ে তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছায় লালটিলা থানার পুলিশ এবং গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে।
মুহূর্তের মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়লে মোদক ইটভাটার আশপাশের এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। অনেকেই ভিড় করেন ঘটনাস্থলে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফরেনসিক টিম ও দমকল কর্মীরাও উপস্থিত হন তদন্ত সহায়তার জন্য।
পুলিশ এখনো পর্যন্ত মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ জানাতে পারেনি। মৃতার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে কিনা, অথবা এটি আত্মহত্যা নাকি পরিকল্পিত হত্যা—তা জানতে ময়নাতদন্তের জন্য দেহ পাঠানো হয়েছে।
তবে মঞ্জু মুন্ডার পরিবারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট অভিযোগ আনা হয়েছে যে এটি কোনোভাবেই স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, বরং এটি পরিকল্পিত খুন। পরিবারের এক সদস্য বলেন,
“আমরা বিশ্বাস করি মঞ্জুকে পরিকল্পনা করে হত্যা করা হয়েছে। তার স্বামী সঞ্জিরা মুন্ডা-র সঙ্গেও বিগত কিছুদিন ধরে পারিবারিক অশান্তি চলছিল। আমরা চাই, পুলিশ নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করুক।”
লালটিলা থানার পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পরপরই প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছে। ইটভাটার মালিক, কর্মী, ও স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মঞ্জু মুন্ডা কেন ওই ঘরে ছিলেন, কীভাবে সেখানে পৌঁছালেন, এবং কার সঙ্গে শেষবার দেখা হয়েছিল—তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এক সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা জানান,
“আমরা সমস্ত সম্ভাবনাকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করেছি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিতভাবে বলা যাবে। দোষী কেউ থাকলে তাকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।”
ঘটনার জেরে এলাকায় আতঙ্ক ও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, ইটভাটায় দীর্ঘদিন ধরে নিরাপত্তার অভাব এবং নিয়ম-নীতি না মানার কারণে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। কেউ কেউ প্রশাসনের উদাসীনতাকেও দায়ী করছেন।
স্থানীয় এক প্রবীণ বাসিন্দা বলেন,
“ইটভাটাগুলোতে না আছে শ্রমিকদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, না আছে সঠিক নজরদারি। যদি প্রশাসন সময়মতো নজর দিত, তাহলে হয়তো আজ এই মেয়েটার প্রাণ যেত না।”
এই রহস্যময় মৃত্যুকে ঘিরে গোটা লালটিলা এলাকায় এখন এক অজানা শঙ্কা ও হতাশা ছেয়ে গেছে। মঞ্জু মুন্ডার পরিবারের মতো এলাকাবাসীরাও চাইছেন অবিলম্বে ঘটনার নিরপেক্ষ ও গভীর তদন্ত হোক এবং প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।