
শহরের বুকে অবাধে বেড়ে চলেছে অসামাজিক কার্যকলাপ.
খোয়াই, ত্রিপুরা : ত্রিপুরার খোয়াই শহরের পরিবেশ আজ চরমভাবে প্রশ্নের মুখে। শহরের প্রাণকেন্দ্রে, জনবসতি ঘেরা এলাকায়—কোনো ভয়ভীতি বা নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই এক শ্রেণীর অসাধু ব্যক্তিরা দাপিয়ে চালাচ্ছে দেহ ব্যবসার অসামাজিক কার্যকলাপ। শুধু দেহ ব্যবসা নয়, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে মাদকের অপব্যবহার, যা এখন শহরের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরেই সোনার তরী সংলগ্ন এলাকায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছিল। অভিযোগ, দিনের আলো হোক বা রাতের অন্ধকার—এই বাড়িগুলিতে চলছে দেহ ব্যবসা, যেখানে আগমন ঘটে বিভিন্ন বাইরের এলাকার লোকজনের। আর এই পুরো প্রক্রিয়া চলে যাচ্ছে এলাকার কিছু বাড়ির মালিকদের ‘সহযোগিতায়’। মোটা টাকার লোভে, কোনরকম পরিচয়পত্র যাচাই বা ন্যূনতম সতর্কতা ছাড়াই বাড়িঘর ভাড়া দিয়ে দিচ্ছে তারা। এই নির্মম উদাসীনতা রীতিমতো ধৃতরাষ্ট্রের ভূমিকাকেই মনে করিয়ে দিচ্ছে।

অবশেষে স্থানীয়দের ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে গেলে, সোমবার রাতে সোনার তরী সংলগ্ন এলাকায় কয়েকজন সাহসী বাসিন্দা অভিযানে নামেন। অভিযোগ অনুযায়ী, তারা বেশ কয়েকটি বাড়িতে হানা দেন এবং সন্দেহভাজন কয়েকজনকে ধরে ফেলেন। যদিও অনেকেই আগেভাগেই টের পেয়ে পালিয়ে যায় বলে জানা গেছে। তবুও এলাকাবাসীর এই সচেতন পদক্ষেপ সমাজের এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই দেহ ব্যবসার আসরকে ঘিরে দেখা যাচ্ছে এক ভয়ঙ্কর প্রবণতা—মাদকসেবন। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মাদক গ্রহণ ও পাচার বেড়ে চলেছে আশঙ্কাজনক হারে। সোনার তরী এলাকা সহ আশেপাশের অঞ্চলে সন্ধ্যা নামতেই শুরু হয় নেশার আসর। এতে করে পড়াশোনা, কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে নিরাপদ জীবনযাত্রা—সবই আজ বিপদের মুখে।
এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত হলেও, অজানা কারণে এতদিন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বরং একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে একের পর এক বেআইনি কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। শহরের অনেক শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিকদের প্রশ্ন—“প্রশাসন যদি সঠিক সময়ে হস্তক্ষেপ করত, তাহলে আজ এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।”
এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জোরালোভাবে দাবি উঠেছে, প্রশাসন যেন অবিলম্বে এই বেআইনি কার্যকলাপ দমনে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে। শুধুমাত্র কিছু লোককে আটক করে দায় সেরে ফেললে হবে না, গোড়া থেকে এই চক্র ভেঙে দেওয়াই এখন সময়ের দাবি।
একসময় শান্তিপূর্ণ ও সুসংগঠিত বলে পরিচিত খোয়াই শহর আজ অন্ধকার জগতের করাল গ্রাসে। নৈতিক অবক্ষয়, আইনের দুর্বল প্রয়োগ, এবং প্রশাসনিক উদাসীনতা মিলিয়ে আজকের প্রজন্ম এক অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছে।
এখন দেখার বিষয়—এই ঘটনার পর প্রশাসন কতোটা তৎপর হয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করে। নাকি এটিও থেকে যাবে আরও একটি ‘চোখ বুঁজে থাকা’র উদাহরণ হয়ে?