কল্যাণপুর, ত্রিপুরা : ত্রিপুরার কল্যাণপুরে ফের একবার প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। গ্যাস বিতরণ কেন্দ্রের বিপজ্জনক কার্যক্রম ও জমি সংক্রান্ত বহুদিনের পুরনো বিবাদকে কেন্দ্র করে স্থানীয়রা এখন কার্যত ফুঁসছেন। রাজ্য প্রশাসনের নিরব ভূমিকা নিয়ে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন—এ কি ‘সর্ষের মধ্যেই ভুত’ নয়?
এদিন সকাল থেকেই দেখা যায়, কল্যাণপুরের একটি ব্যস্ত জনবহুল রাস্তায় গ্যাস বিতরণ কেন্দ্রের সামনে ট্রাক থেকে সিলিন্ডার ওঠানামা চলছে, কোনও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই। যত্রতত্র ছড়িয়ে থাকা সিলিন্ডার এবং ট্রাকের জটলায় রাস্তায় সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। স্থানীয় বাসিন্দা, পথচারী ও গাড়িচালকরা তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েন।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এই সড়কটির ওপর দিয়েই রয়েছে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ লাইন। অথচ তার নিচে দাঁড়িয়েই চালানো হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডারের লেনদেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি একটি ‘টাইম বোমা’র মতো পরিস্থিতি, যে কোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা।

স্থানীয় সূত্র অনুযায়ী, এই বিপজ্জনক পরিবেশ সম্পর্কে কল্যাণপুর থানার পুলিশ এবং অগ্নিনির্বাপন দপ্তরের কর্মকর্তারা সম্পূর্ণ অবগত। এমনকি প্রতিবেশী এলাকাগুলিতেও খবর ছড়িয়ে পড়েছে এই ঝুঁকিপূর্ণ কার্যকলাপ সম্পর্কে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গ্যাস এজেন্সিটি দীর্ঘদিন ধরে মহকুমা প্রশাসনের নির্দিষ্ট একটি অংশকে ম্যানেজ করে তাদের বেআইনি কার্যকলাপ নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে জননিরাপত্তা নিয়ে প্রশাসনের দায়িত্ববোধ নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে।
একজন স্থানীয় শিক্ষক বলেন, “যেখানে সাধারণ মানুষের জীবন-মরণ জড়িয়ে, সেখানে প্রশাসনের এই নীরবতা প্রমাণ করে তারা হয় উদাসীন, নয়তো এই কাজের সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িত।” একইসঙ্গে এলাকাবাসীর অভিমত, এই ঘটনা শুধু গাফিলতি নয়, বরং এর পেছনে সুস্পষ্টভাবে রয়েছে প্রশাসনিক আনুগত্যহীনতা এবং স্বার্থের রাজনীতি।
এই ঘটনাকে ঘিরে কল্যাণপুরের বিভিন্ন মহলে প্রচণ্ড অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। বাজার, স্কুল, এবং আবাসিক এলাকার কাছাকাছি গ্যাস সিলিন্ডার পরিবহন এবং সংরক্ষণ – এসবই নাগরিক নিরাপত্তার পরিপন্থী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অনেকেই মনে করছেন, যদি প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তবে এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে বৃহৎ গণআন্দোলন গড়ে উঠতে পারে।
এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন সাধারণ মানুষের চাপের মুখে পড়ে কোনও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে কি না। না হলে এর প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়তে পারে বৃহত্তর রাজনৈতিক ময়দানেও।








