
তেলিয়ামুড়া, ২২ মে: তেলিয়ামুড়া মহকুমা হাসপাতাল যেন আজ নিছক একটি চিকিৎসাকেন্দ্র নয়, বরং অব্যবস্থা, অবহেলা, এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতার জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। বিগত দুই দিন ধরে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় কার্যত ধুঁকছে হাসপাতালের পরিষেবা। সন্ধ্যার পর থেকে হাসপাতাল চত্বর ঢেকে যায় ঘোর অন্ধকারে। আশ্রয় নেয় মোমবাতির আলোয় চিকিৎসা — যা একবিংশ শতাব্দীর ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র বাস্তব চিত্রকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চিকিৎসাধীন সাধারণ মানুষ, যাঁদের অধিকাংশই গ্রামীণ ও নিম্ন আয়ের শ্রেণির। বহু রোগী অন্ধকার ও অব্যবস্থার কারণে চিকিৎসা না করিয়ে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন। আশ্চর্যের বিষয়, হাসপাতালের জেনারেটর যা লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা হয়েছিল, সেটিও এখন বিকল অবস্থায় পড়ে রয়েছে দিনের পর দিন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, উপযুক্ত পরিচর্যা এবং দক্ষ টেকনিশিয়ান না থাকার কারণে জেনারেটর চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
তবে সবথেকে উদ্বেগজনক অভিযোগ উঠেছে খোদ হাসপাতালের এসডিএমও ডাঃ রাজা জমাতিয়ার বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ সামনে এসেছে — যেগুলোর মধ্যে রয়েছে নিজের ব্যবস্থাপত্রে কমিশনের ভিত্তিতে ওষুধ লেখা, বেসরকারি প্যাথলজির সঙ্গে আঁতাত করে আর্থিক লাভ করা এবং হাসপাতালের প্রশাসনিক দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করা।
হাসপাতাল ঘিরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, কিভাবে একাধিক চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞরাও এখন কমিশন-ভিত্তিক ওষুধ এবং পরীক্ষার মাধ্যমে রোগীদের পকেট কাটা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছেন। এতে করে তেলিয়ামুড়া মহকুমা হাসপাতাল কার্যত রুগ্ন প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। এই সমস্ত কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে ডাঃ রাজা জমাতিয়ার নাম উঠে আসছে, যিনি এসডিএমও হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই হাসপাতালের সার্বিক অবস্থা আরও করুণ হয়ে উঠেছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
অন্যদিকে, এলাকার বিধায়িকা তথা রাজ্যের মুখ্য সচেতক কল্যাণী সাহা রায় বিভিন্ন সময়ে এই হাসপাতালকে ‘আধুনিক ও উন্নত পরিকাঠামোর’ মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করলেও বাস্তবচিত্র যেন তার ঠিক উল্টো। হাসপাতাল চত্বরে পা রাখলেই সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ, হতাশা এবং প্রশ্নের ছায়া স্পষ্ট চোখে পড়ে।
তেলিয়ামুড়ার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ মহকুমায় যদি চিকিৎসা ব্যবস্থার এই করুণ দশা চলতে থাকে, তবে তা শুধুমাত্র স্বাস্থ্য খাত নয়, গোটা প্রশাসনিক কাঠামোর উপরই বড় প্রশ্নচিহ্ন তুলে দেয়। এখন দেখার বিষয়, এই সকল অভিযোগ এবং জনসাধারণের অসন্তোষের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের উচ্চ মহল থেকে কোনও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় কি না।