রাস পূর্ণিমা উপলক্ষে শান্তির বাজার মহকুমার অন্তর্গত প্রতিছড়ি মুড়াসিং পাড়ায় অনুষ্ঠিত হতে চলেছে শ্রী শ্রী হরিচাঁদ গোস্বামীর মন্দির প্রাঙ্গণে বর্ণাঢ্য রাজ্যভিত্তিক মুড়াসিং সামাজিক সাংস্কৃতিক মেলা। সরকারি দপ্তরের স্টল, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতিতে জাঁকজমকভাবে আয়োজিত হবে মেলা। রবিবার আয়োজকদের সাংবাদিক সম্মেলনে প্রকাশ পেল প্রস্তুতির বিস্তারিত বিবরণ।
শান্তির বাজার , ত্রিপুরা । রিপোর্ট- বাহাদুর ত্রিপুরা : রাস পূর্ণিমা মানেই ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসবের এক অনন্য মেলবন্ধন। সেই ঐতিহ্য বজায় রেখেই শান্তির বাজার মহকুমার অন্তর্গত প্রতিছড়ি মুড়াসিং পাড়ায় আসন্ন ৫ই নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ৪৬তম রাজ্যভিত্তিক মুড়াসিং সামাজিক সাংস্কৃতিক মেলা।
মেলার আয়োজক সংস্থা মুড়াসিং সামাজিক সংস্থা ইতিমধ্যেই মেলার প্রস্তুতিকে ঘিরে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। শ্রী শ্রী হরিচাঁদ গোস্বামীর মন্দির প্রাঙ্গণ জুড়ে চলছে রঙ, আলোকসজ্জা ও নানা সাংস্কৃতিক উপকরণের সাজসজ্জা। প্রতিবছরের মতো এ বছরও মেলা ঘিরে জমে উঠেছে স্থানীয় জনগণ ও ধর্মপ্রাণ দর্শনার্থীদের উচ্ছ্বাস।
প্রতিবছর রাস পূর্ণিমা উপলক্ষে এই মন্দিরে পূজা করে থাকেন মুড়াসিং সম্প্রদায়ের পাশাপাশি বিভিন্ন জাতি ও জনজাতির মানুষ। রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন শত শত পুণ্যার্থী। এ বছরও ব্যতিক্রম নয়। মেলা প্রাঙ্গণে ভক্ত, দর্শনার্থী ও সংস্কৃতি অনুরাগীদের ভিড় জমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন রাজ্যের দুই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী — অনিমেষ দেববর্মা এবং শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া। সঙ্গে থাকবেন বিধায়ক প্রমোদ রিয়াং, এম.ডি.সি. পদ্মলোচন ত্রিপুরা, এবং মুড়াসিং সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট নেতা সুনীল মুড়াসিং, হদা তৈই ফাং সুনীল মুড়াসিং সহ বহু সমাজসেবী ও জনপ্রতিনিধি।
মেলায় রাজ্য সরকারের বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্প এবং দপ্তরের কর্মকাণ্ড জনসম্মুখে তুলে ধরতে বিশেষ স্টল স্থাপন করা হবে। উপস্থিত দর্শনার্থীরা সেই স্টলের মাধ্যমে সরকারের উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে পারবেন।
শুধু ধর্মীয় নয়, সাংস্কৃতিক দিক থেকেও এই মেলাকে ঘিরে উৎসবের আবহ তৈরি হয়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য থাকবে রাতব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যেখানে স্থানীয় শিল্পীদের পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের শিল্পীরাও অংশগ্রহণ করবেন। সংগীত, নৃত্য, নাটক— সব মিলিয়ে হবে এক মনোজ্ঞ আয়োজন।
মেলার শেষ প্রস্তুতি নিয়ে রবিবার শ্রী শ্রী হরিচাঁদ গোস্বামীর মন্দির প্রাঙ্গণের মুক্তমঞ্চে একটি সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মুড়াসিং সামাজিক সংস্থার সভাপতি সুনীল মুড়াসিং, মেলার জেনারেল সেক্রেটারি ভাগ্যচরণ মুড়াসিং, এবং যুব সংগঠনের সভাপতি রাজেশ মুড়াসিং সহ সংস্থার অন্যান্য সদস্যরা।
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সভাপতি সুনীল মুড়াসিং জানান— “সরকার ও প্রশাসনের সক্রিয় সহযোগিতায় এবং স্থানীয় জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় এ বছরও মেলার সফল আয়োজন সম্ভব হচ্ছে। আমরা প্রত্যাশা করছি, অন্যান্য বছরের মতো এই বছরও মেলা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এই মেলার মূল উদ্দেশ্য হলো সমাজে ঐক্য, সম্প্রীতি ও সংস্কৃতির ধারাকে বজায় রাখা। ধর্মীয় ও সামাজিক মেলবন্ধনের মধ্য দিয়ে সমাজকে আরও সচেতন করা।”
সাংবাদিক সম্মেলনে আয়োজকদের বক্তব্যে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে একটাই বার্তা — মেলা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি মুড়াসিং সমাজের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতীক।
সব মিলিয়ে, শান্তির বাজার মহকুমা এখন মুড়াসিং মেলার উৎসবে মেতে উঠতে প্রস্তুত। আগামী ৫ই নভেম্বর প্রতিছড়ি মুড়াসিং পাড়ার আকাশে বাজবে আলোর ঝলকানি, বাজবে ঢাকের আওয়াজ, আর তার সঙ্গে মিলেমিশে থাকবে মুড়াসিং সমাজের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সুর।
আয়োজকদের আশা— প্রশাসনের সহায়তা, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা এবং সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় এবারের ৪৬তম রাজ্যভিত্তিক মুড়াসিং সামাজিক সাংস্কৃতিক মেলাও সুষ্ঠুভাবে ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে, এবং নতুন প্রজন্মের কাছে বয়ে আনবে ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির নতুন বার্তা।








