সিভিল সোসাইটির বনধ উপেক্ষা করে কৃষ্ণপুরের মুঙ্গিয়াকামি বাজারে জনজোয়ার; মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা ও মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মার নেতৃত্বে বিজেপির শক্তিবৃদ্ধি।
মুঙ্গিয়াকামি বাজার,কৃষ্ণপুর । ২৪ অক্টোবর ২০২৫ঃ ত্রিপুরার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক গুরুত্বপূর্ণ দিনে, সিভিল সোসাইটির ডাকা ২৪ ঘণ্টার বনধের মধ্যেই, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এক ঐতিহাসিক যোগদান সভার আয়োজন করে নিজেদের রাজনৈতিক শক্তি ও জনসমর্থনের এক নতুন মাত্রা স্থাপন করলো। ২৯ কৃষ্ণপুর মণ্ডলের অন্তর্গত মুঙ্গিয়াকামি বাজার প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এই বিশাল জনসভা, যা রামকৃষ্ণপুর শক্তিকেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছিল, তা বানচাল করার সমস্ত অপচেষ্টা এবং বাধা-বিপত্তিকে উপেক্ষা করে শুক্রবার এক সফল দলত্যাগ অনুষ্ঠানের সাক্ষী থাকলো। এই যোগদান সভা শুধুমাত্র বিজেপির সাংগঠনিক দৃঢ়তাই প্রমাণ করলো না, বরং ত্রিপুরার জনজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলের উন্নয়নে দলের অঙ্গীকারকে আরও একবার তুলে ধরলো।
মুঙ্গিয়াকামি বাজারের বিশাল উন্মুক্ত মাঠে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আয়োজিত এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের রাজনৈতিক মহলের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ। ২৯ কৃষ্ণপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক তথা রাজ্যের জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের মাননীয় মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মার নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এই দলত্যাগ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ড.) মানিক সাহা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিজেপি প্রদেশ সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য, প্রাক্তন সাংসদ রেবতী ত্রিপুরা, এবং ২৯ কৃষ্ণপুর মণ্ডল সভাপতি ধনঞ্জয় দাস সহ প্রদেশ কমিটির অন্যান্য বরেণ্য নেতৃবৃন্দ। তাঁদের সম্মিলিত উপস্থিতিতে সভা প্রাঙ্গণ এক উৎসবের চেহারা নেয়, যেখানে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো।
এদিন মুঙ্গিয়াকামি এলাকার সঞ্জীব দেববর্মার নেতৃত্বে এক অভূতপূর্ব সাড়া লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে মোট ২১৩০টি পরিবার—যার সম্মিলিত ভোটার সংখ্যা ৬৪৬০ জন—বিজেপির পতাকা হাতে তুলে নেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ড.) মানিক সাহার হাত থেকে বিজেপির দলীয় পতাকা গ্রহণ করে তাঁরা ভারতীয় জনতা পার্টির প্রতি তাঁদের পূর্ণ আস্থা ও সমর্থন ব্যক্ত করেন। এই বিশাল সংখ্যক ভোটারের যোগদান ত্রিপুরার রাজনীতিতে বিজেপির ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা এবং জনভিত্তিকে আরও সুদৃঢ় করলো।
যোগদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, “বিজেপি কখনো সন্ত্রাসের রাজনীতি করে না। আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হলো উন্নয়নের রাজনীতি, যা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ড. মানিক সাহার নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে।” তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের এই উন্নয়নমুখী জনসভাকে বানচাল করার লক্ষ্যে গতকাল শক্তিকেন্দ্রে আক্রমণ চালানো হয়েছে। এমনকি জনসভার মঞ্চেও ভাঙচুর চালানো হয়েছিল। কিন্তু এই ধরনের কাপুরুষোচিত আক্রমণ আমাদের মনোবলকে দুর্বল করতে পারেনি। আমরা ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ড. মানিক সাহার নেতৃত্বে উন্নয়নমুখী প্রশাসনের উপর পূর্ণ আস্থা রেখে এগিয়ে চলেছি। সেই আস্থার ফলেই আজ ৫,০০০ নয়, তার চেয়েও বেশি—৬,৪৬০ জন ভোটার বিজেপিতে যোগ দিলেন, যা আমাদের সংকল্পকে আরও শক্তিশালী করবে।” তাঁর বক্তব্যে তিনি ত্রিপুরার উন্নয়নের প্রতি বিজেপির অবিচল প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ড.) মানিক সাহা তাঁর ভাষণে জোর দিয়ে বলেন, “ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী উপজাতি এলাকাগুলির সামগ্রিক উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিকাঠামো—সবক্ষেত্রেই একের পর এক জনমুখী প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে, যার সুফল ইতিমধ্যেই রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ পেতে শুরু করেছেন। আমাদের লক্ষ্য প্রতিটি পরিবারের মুখে হাসি ফোটানো এবং একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত ত্রিপুরা গড়ে তোলা।”
তিনি আরও যোগ করেন, “বিজেপি সরকার সর্বদা রাজ পরিবারের সম্মান রক্ষা করে আসছে। মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুরের জন্মদিনে সরকারি ছুটি ঘোষণা, আগরতলা বিমানবন্দরের নামকরণ ‘মহারাজা বীর বিক্রম বিমানবন্দর’, এবং রাজ পরিবারের সদস্য প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মাকে তেলেঙ্গানার রাজ্যপাল হিসেবে নিয়োগ—এগুলোই সেই সম্মান ও শ্রদ্ধার সুস্পষ্ট প্রতিফলন।” মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য রাজ পরিবারের প্রতি বিজেপির দায়বদ্ধতা এবং ত্রিপুরার ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের প্রতি তাদের সংবেদনশীলতাকে তুলে ধরে।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আরও আশ্বাস দেন, “ত্রিপুরার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতে বসবাসকারী জনজাতি মানুষদের উন্নয়নের জন্য সরকার নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। শিক্ষার আলো থেকে শুরু করে মৌলিক চাহিদা—যেমন বিশুদ্ধ পানীয় জল, স্বাস্থ্য পরিষেবা, আবাসন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা—সব ক্ষেত্রেই আমাদের লক্ষ্য সুষম ও সমান উন্নয়ন নিশ্চিত করা।” তিনি সকল স্তরের মানুষের প্রতি সরকারের সমান দৃষ্টির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
দিনের এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান শুধুমাত্র এক রাজনৈতিক সংহতির প্রতীক নয়, বরং ত্রিপুরার রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এটি প্রমাণ করলো যে উন্নয়নের রাজনীতি এবং জনগণের কল্যাণের প্রতি সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারই সকল বাধা অতিক্রম করে জনসমর্থন আদায়ে সক্ষম। মুঙ্গিয়াকামি বাজারের এই জনজোয়ার ত্রিপুরার আগামীর রাজনৈতিক গতিপথ নির্ধারণে এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিল।








