ভাইফোঁটার দিনে বন্ধের ডাক ঘিরে বিতর্ক, এম্বুলেন্স আটকে বিপাকে রোগী, পুলিশের নীরবতা প্রশ্নের মুখে।
ত্রিপুরা । ২৩ অক্টোবর ২০২৫ঃ ত্রিপুরা রাজ্যে আজকে বন্ধের ডাক ঘিরে দেখা গেল চরম বিশৃঙ্খলা। আশ্চর্যের বিষয়, এই বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে এমন এক রাজনৈতিক দল, যারা বর্তমানে রাজ্য সরকারের শরিক এবং ক্ষমতার অংশীদার। দলের বিধায়ক-মন্ত্রীদের উপস্থিতিতে সরকার পরিচালনার দায়িত্বে থেকেও আজ তারা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেছে—এই দ্বৈত ভূমিকা নিয়েই উঠছে নানা প্রশ্ন।
তিপ্রা মথা দলের তরফে সরাসরি বন্ধ ডাকার পরিবর্তে বকলমে “সিভিল সোসাইটি”-র নামে বন্ধ আহ্বান করা হয়েছে। কিন্তু সেই বন্ধের দিন ঠিক হয়েছে ভাইফোঁটার দিনেই—যা নিয়ে আগেই আপত্তি জানিয়েছিল রাজ্যের বিভিন্ন মহল। একাধিক মহল অনুরোধ করেছিল, অন্তত একদিন পিছিয়ে দেওয়া হোক বন্ধের দিনক্ষণ।
চাপের মুখে মুখ্যমন্ত্রী গতকাল বিবৃতি দিয়ে জানান, সরকার বন্ধের বিরোধিতা করছে, এবং সমস্ত অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ খোলা থাকবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র।
সকালে আগরতলার উত্তরগেট সংলগ্ন এলাকায় দেখা যায় পিকেটারদের রাস্তায় অবস্থান। অফিসগামী মানুষ থেকে শুরু করে চিকিৎসকরাও পড়েন চরম সমস্যায়। এক চিকিৎসক অভিযোগ করেন, হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার সময় পিকেটাররা তার গাড়ির চাবি কেড়ে নেয় পুলিশের সামনেই। অথচ পুলিশ প্রশাসন নীরব দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
শহরের এমন অবস্থায় মফস্বলের পরিস্থিতি যে আরও শোচনীয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অনেক এলাকায় সাধারণ পথচারীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ, গালিগালাজ, এমনকি টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধের ঘটনাও ঘটে। আগরতলার বড়মুড়া এলাকায় তো এম্বুলেন্স পর্যন্ত আটকে দেওয়া হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা তিনটি এম্বুলেন্স রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল—অবশেষে সংবাদমাধ্যমের চাপে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়।
সবাই জানে, এম্বুলেন্স, অগ্নিনির্বাপক, ফল-ঔষধের দোকানসহ জরুরি পরিষেবা সবসময় বন্ধের বাইরে থাকে, কিন্তু আজ সেই মৌলিক নিয়মেরও ব্যত্যয় ঘটেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জনজাতি অংশের ডাকা এই ধরনের বন্ধে আগেও দেখা গেছে অতিরিক্ত সহিংসতা ও প্রশাসনের অসহায় ভূমিকা। বাম আমলেও একই দৃশ্য দেখা গিয়েছিল—১১ দিন ধরে রাস্তা অবরোধ করে বসেছিল একদল আন্দোলনকারী, তখনও প্রশাসন ছিল নিষ্ক্রিয়।
আজ আবার ইতিহাস যেন ফিরে এসেছে। কেউ বলছেন, এটি রাজ্যের রাজনৈতিক তোষণনীতির নগ্ন উদাহরণ। মুখ্যমন্ত্রী যদি সত্যিই বন্ধের বিরোধিতা করে থাকেন, তবে পুলিশ প্রশাসন কেন নিরব দর্শক রয়ে গেল, সেই প্রশ্ন উঠছে সর্বত্র।
অপরদিকে মথা কর্মীদের বাধাদানের কারণে রেল পরিষেবাও ব্যাহত হয়। বেশ কিছু ট্রেন বাতিলের ঘোষণা দিতে বাধ্য হয় রেল কর্তৃপক্ষ। আরও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে জাতীয় পতাকার অবমাননা নিয়ে—বিভিন্ন স্থানে পতাকাকে ব্যবহার করা হয়েছে অবরোধের প্রতীক হিসেবে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয় বলে মত সাধারণ মানুষের।
রাজনৈতিক মহল বলছে, সরকারের ভূমিকা যেন সাপও মরল না, লাঠিও ভাঙল না—একদিকে মুখে বিরোধিতা, অন্যদিকে মাটিতে নীরব সমর্থন।
এ নিয়ে “আমরা বাঙালি” দলের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলা হয়েছে—
“সরকার যদি বন্ধের বিরোধিতা করেই থাকে, তাহলে কেন পুলিশ প্রশাসন নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করল? ক্ষমতাসীনদের এই দ্বিচারিতা রাজ্যের গণতান্ত্রিক পরিবেশকে কলুষিত করছে।”
ত্রিপুরার মানুষ তাই আজ প্রশ্ন তুলছে—তোষণের রাজনীতি আর কতদিন চলবে এই রাজ্যে?








