মহুরীপুরে রাজন্য শাসনকালে স্থাপিত ঐতিহ্যবাহী মন্দিরে ১৯ তম উৎসবের সূচনা; দেবী ষোড়শী রূপে পূজিতা, শবাসনে শায়িত শিবের ওপর বিরাজমান প্রতিমা।
শান্তির বাজার, ত্রিপুরা । ২১ অক্টোবর ২০২৫ঃ ত্রিপুরার আধ্যাত্মিক এবং ঐতিহ্যবাহী উৎসবের পঞ্জিকায় এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে মহুরীপুরে অবস্থিত রাজ রাজেশ্বরী মন্দির। রাজন্য শাসনকালে স্থাপিত এই প্রাচীন মন্দির প্রাঙ্গণে আজ, শনিবার, ১৯ তম রাজ রাজেশ্বরী পর্যটন উৎসব ২০২৫-এর শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হলো। এই বছর উৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা করলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান পশ্চিম ত্রিপুরা লোকসভা আসনের মাননীয় সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব। তাঁর হাত ধরেই এলাকার সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের এই ১৯ বছরের পথচলা নতুন করে গতি পেল।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ জেলা পরিষদ এর সভাধিপতি দীপক দত্ত, দক্ষিণ পিলাক জেলার সভাপতি দ্বীপায়ন চৌধুরী, শান্তির বাজার মহকুমা শাসক সঞ্জীব চাকমা, জোলাইবাড়ী আর ডি ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতি চেয়ারম্যান তাপস দত্ত এবং জোলাইবাড়ী আর ডি ব্লকের ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক নবব্রত দত্ত সহ অন্যান্য বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ। অতিথিবৃন্দের উপস্থিতিতে মন্দির প্রাঙ্গণ আজ এক মিলনক্ষেত্রে পরিণত হয়।
বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং বর্তমান পশ্চিম ত্রিপুরা আসনের সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেন। তিনি রাজ্যের তিনটি ঐতিহ্যবাহী শক্তিপীঠ— বিলোনিয়ার যোগমায়া কালীবাড়ি, মহুরীপুরের রাজেশ্বরী কালীবাড়ি এবং সাব্রুমের দৈতেশ্বরী কালীবাড়ির সার্বিক উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ৩০ কোটি টাকার এক বিশেষ তহবিল মঞ্জুর করার অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন যে, এই তিনটি মন্দিরের মাধ্যমে রাজ্যের ধর্মীয় পর্যটনকে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “শিগগিরই এই টাকা মঞ্জুর হবে এবং এই মন্দিরগুলির ঐতিহ্য রক্ষা ও পর্যটকদের জন্য আরও আকর্ষণীয় করে তোলার কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।”
সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব মহুরীপুর রাজ রাজেশ্বরী মন্দিরের মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, এটি কেবল একটি উপাসনালয় নয়, এটি ত্রিপুরার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। তিনি জানান, এখানে দেবী রাজ রাজেশ্বরী, যিনি দুর্গার ষোড়শী রূপ হিসেবে পূজিতা হন, তাঁর আরাধনা করা হয়। এই মন্দিরের প্রতিমা কাঠামোর মূল বৈশিষ্ট্যটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ: এখানে দেবী শবাসনে শায়িত শিবের ওপর বিরাজ করেন। অর্থাৎ, প্রতিমাটি এমন কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত, যেখানে শিব শবাসনে শায়িত থাকেন এবং দেবীর নাভি থেকে শিবের মূর্তি নির্গত হয়—যা এই দেবীর বিশেষ iconography-কে ফুটিয়ে তোলে। ভক্তরা এই হিন্দু মন্দিরে মায়ের পূজা ও আশীর্বাদ প্রার্থনা করে মানসিক শান্তি লাভ করেন।
রাজ রাজেশ্বরী পর্যটন উৎসব কেবল ধর্মীয় অনুভূতির প্রকাশ নয়, বরং স্থানীয় শিল্প, সংস্কৃতি এবং হস্তশিল্পকে প্রচার করার এক সুবর্ণ সুযোগ। মহুরীপুরের এই ঐতিহ্যবাহী মন্দিরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই উৎসব ত্রিপুরার পর্যটন মানচিত্রে একটি বিশেষ স্থান করে নিয়েছে, যা আগামী দিনগুলিতে রাজ্যের সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতৃত্ব ও প্রশাসন।








