ঊষাবাজার, আগরতলা। ২২ আগস্ট ২০২৫ঃ আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘের আনাগোনা আর শিউলি ফুলের গন্ধ—বাঙালির ক্যালেন্ডারে জানান দিচ্ছে, উমা আসছেন। মহালয়ার ভোরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে চণ্ডীপাঠের অপেক্ষায় যখন দিন গুনছে বাঙালি, ঠিক তখনই উৎসবের প্রস্তুতিতে নিজেদের উজাড় করে দিয়েছে ভারত রত্ন সংঘ ক্লাব।[1] শহরের অলিতে গলিতে যখন উৎসবের কাউন্টডাউন শুরু, তখন এই ক্লাবের প্রস্তুতি যেন এক ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে।
এ বছর ক্লাবের কর্মযজ্ঞের নেতৃত্বে রয়েছেন এক ঝাঁক উদ্যমী মুখ। সভাপতির গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করেছেন সুমঙ্গল ঘোষ। তার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সহ-সভাপতির আসন অলংকৃত করেছেন বিশ্বজিৎ দাস এবং সঞ্জীব চক্রবর্তী। ক্লাবের প্রাণকেন্দ্র সম্পাদক পার্থ চৌধুরীর সুদক্ষ নেতৃত্বে প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। তাঁকে এই বিশাল কর্মযজ্ঞে সহায়তা করছেন দুই সহ-সম্পাদক নবরুণ চক্রবর্তী এবং মুকেশ কিশোর রায়। কোষাধ্যক্ষ সীতারাম বিন এবং তার সহযোগী বিকি দাস ও জয়দীপ রেল্লি নিপুণ হাতে সামলাচ্ছেন আর্থিক দিক। কমিটির প্রতিটি সদস্যের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসই এই পুজোর প্রধান শক্তি।
মণ্ডপ থেকে প্রতিমা: শিল্পকলার অবাক করা যুগলবন্দী
ইতিমধ্যেই মণ্ডপ নির্মাণের কাজ দর্শকদের মনে কৌতূহল জাগিয়েছে। কলকাতার নামকরা শিল্পীদের হাতের ছোঁয়ায় বাঁশ, কাপড় আর আলোর মেলবন্ধনে গড়ে উঠছে এক স্বপ্নের প্যান্ডেল। দিনরাত এক করে শিল্পীরা তাদের সৃজনশীলতাকে ফুটিয়ে তুলছেন মণ্ডপের প্রতিটি কোণায়। অন্যদিকে, স্থানীয় প্রতিভাবান শিল্পীর নিপুণ হাতে তৈরি হচ্ছে মাতৃপ্রতিমা। মৃন্ময়ী মূর্তিতে ফুটে উঠছে চিন্ময়ী রূপ, যা দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন এলাকাবাসী। মায়ের চোখে-মুখে ফুটে উঠছে অনাবিল দেবীর মাধুর্য।

শুধু উৎসব নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতার বার্তা
ক্লাব সম্পাদক পার্থ চৌধুরী জানান, “আমাদের ক্লাব শুধু দুর্গোৎসবে সীমাবদ্ধ নয়। সারা বছর ধরেই আমরা বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকি।” দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ, রক্তদান শিবিরের আয়োজন এবং দুঃস্থদের জন্য চিকিৎসা শিবিরের মতো নানা জনকল্যাণমূলক কাজে ব্রতী এই ক্লাব। তাদের এই উদ্যোগ প্রমাণ করে, দুর্গাপূজা শুধু আনন্দ-উৎসব নয়, এটি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এক বড় মঞ্চও বটে।
সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় মাতবে উৎসবের চারদিন
এবারের পুজোকে কেন্দ্র করে থাকছে একাধিক সাংস্কৃতিক আয়োজন। পুজোর চারদিন জুড়ে থাকছে নানান মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান। স্থানীয় শিল্পীদের অংশগ্রহণে নাচ, গান, আবৃত্তি ও নাটকে মুখরিত থাকবে উৎসব প্রাঙ্গণ। এছাড়াও, বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকছে চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা। আলো ও ছায়ার খেলায় মণ্ডপ চত্বরে তৈরি হবে এক মায়াবী পরিবেশ, যা দর্শকদের এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এলাকার মানুষের মধ্যে ইতিমধ্যেই উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। মণ্ডপের প্রস্তুতি দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন অগণিত মানুষ। ছোট থেকে বড়, সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এলাকাটি এখন এক মিলন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ক্লাব কর্তৃপক্ষের বিশ্বাস, এ বছরের দুর্গাপূজা শুধু বিনোদনের খোরাক হবে না, বরং ভক্তি ও সামাজিক দায়বদ্ধতার এক অনন্য বার্তা পৌঁছে দেবে সকলের হৃদয়ে।
এখন শুধু মহাষষ্ঠীর ভোরের অপেক্ষা। সেদিনই উন্মোচিত হবে पडद्यामागची कला আর উন্মোচিত হবে ভক্তির এক অপূর্ব মেলবন্ধন, যার সাক্ষী থাকতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে শহরবাসী।








