সন্দেহজনক আচরণের জেরে ক্ষোভে ফেটে পড়ে গ্রামবাসী; পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে দৌড়ে যায় তেলিয়ামুড়া থানা পুলিশ.
তেলিয়ামুড়া, ত্রিপুরা । ২৯ নভেম্বর ২০২৫ঃ তেলিয়ামুড়া থানাধীন ইচারবিলের ষোলঘরিয়া এলাকায় শনিবার সকালেই ঘটে গেল এক চাঞ্চল্যকর এবং উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনা। শিশু পাচারকারী সন্দেহে এক অজ্ঞাতপরিচয় যুবককে আটক করে তাকে ঘিরে ধরে মারধর করে উত্তেজিত এলাকাবাসী। মুহূর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা, এবং পুরো এলাকাজুড়ে তৈরি হয় আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খলার পরিবেশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকালে ওই ব্যক্তি এলাকায় ঘোরাঘুরি করছিলেন এবং কিছু শিশুদের সঙ্গে সন্দেহজনক ভঙ্গিতে কথাবার্তা বলছিলেন। শিশুরা তার অস্বাভাবিক আচরণে অস্বস্তি প্রকাশ করলে তা নজরে আসে আশপাশের বাসিন্দাদের। এরপরই এলাকাবাসীর মধ্যে সন্দেহ দানা বাঁধে—ব্যক্তিটি শিশু পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করতে শুরু করেন সবাই।
পরিস্থিতি দ্রুতই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই উত্তেজিত জনতা ওই যুবককে চারদিক থেকে ঘিরে ধরে এবং শুরু হয় বেধড়ক মারধর। রাস্তায় ফেলে চলে নির্দয় গণপিটুনি। অতিরিক্ত আঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন যুবকটি। ঘটনাস্থলেই উপস্থিত ব্যক্তিরা আতঙ্কগ্রস্ত হলেও জনতার রোষ থামানো যাচ্ছিল না।
ঘটনার খবর পেয়ে তেলিয়ামুড়া থানার পুলিশ তৎপর হয়ে মুহূর্তেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রবল উত্তেজনার মধ্যে থেকে আহত যুবককে উদ্ধার করে দ্রুত তেলিয়ামুড়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী ওই যুবক বিহার রাজ্যের বাসিন্দা। তবে তিনি কেন এই প্রত্যন্ত এলাকায় এসেছিলেন, কী উদ্দেশ্যে শিশুদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, কিংবা তার আচরণ কতটা সন্দেহজনক ছিল—এসব বিষয়ে চলছে জিজ্ঞাসাবাদ। তদন্তে সহযোগিতা করতে ইতিমধ্যেই কয়েকজন স্থানীয়কেও জেরা করা হচ্ছে।
ঘটনার পর এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। জনসাধারণের ভিড় নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চলছে এবং প্রমাণ ছাড়া কাউকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে না।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন,
“সচেতনতা অবশ্যই জরুরি, কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। কোন ব্যক্তিকে সন্দেহ হলে তা অবিলম্বে পুলিশকে জানানো উচিত—গণপিটুনি একটি দণ্ডনীয় অপরাধ।”
এই ঘটনাটি আবারও সামনে এনে দিল সেই কঠোর বাস্তবতা—গুজব, আতঙ্ক এবং সন্দেহ অল্প সময়েই কীভাবে গণপিটুনির মতো অমানবিক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। একই সঙ্গে এটি মনে করিয়ে দেয়, সামাজিক সচেতনতার পাশাপাশি আইনের প্রতি আস্থা রাখাও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।








