প্রেমঘন গানে ভিডিও তৈরির প্রবণতা বৃদ্ধিতে অভিভাবক ও শিক্ষাবিদ মহলে গভীর উদ্বেগ; ক্লাসের সময় মোবাইল ব্যবহারের উপর নজরদারির অভাবের অভিযোগ তুলেছেন একাংশ।
শিক্ষা জগতের মানচিত্রে এক নতুন ও উদ্বেগজনক প্রবণতা দ্রুতগতিতে বিস্তার লাভ করছে, যা প্রতিষ্ঠান ও অভিভাবক মহলে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
নিউজ ডেস্কঃ সাম্প্রতিককালে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম, বিশেষত রিলস প্ল্যাটফর্মগুলিতে, স্কুল পড়ুয়াদের এক নতুন ধরনের ডিজিটাল সক্রিয়তা নজরে এসেছে। দেখা যাচ্ছে, ছাত্রছাত্রীরা, বিশেষত স্কুল ছাত্রীরা, তাদের নির্ধারিত স্কুল ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় প্রেমঘন এবং রোমান্টিক গানের তালে ভিডিও তৈরি করছে এবং তা প্রকাশ্যে আপলোড করছে। এই ধরনের কনটেন্টগুলি সমাজের কাছে যেমন দ্রুত পৌঁছাচ্ছে, তেমনই তা নিয়ে তৈরি হচ্ছে বড়সড় বিতর্ক।
স্কুল ইউনিফর্ম বা বিদ্যালয়ের পোশাক একটি নির্দিষ্ট শৃঙ্খলা, শিক্ষা এবং নৈতিকতার প্রতীক। অভিভাবক ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ এই প্রবণতাটিকে অত্যন্ত গুরুতর ও বিপজ্জনক মনে করছেন। তাদের মতে, যখন কোমলমতি শিক্ষার্থীরা স্কুল পোশাক পরে এমন ধরনের প্রেম-নির্ভর বা আবেগঘন অঙ্গভঙ্গিমায় রিলস তৈরি করে, তখন সেই পোশাকের পবিত্রতা এবং মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হতে পারে। বিদ্যালয়ের কঠোর অনুশাসন থেকে দূরে গিয়ে এমন ‘ডিজিটাল বিলাসিতা’ একপ্রকার প্রতিষ্ঠানের মূল্যবোধকেই চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
শুধুমাত্র বিদ্যালয়ের পোশাকের মর্যাদার প্রশ্নই নয়, এই প্রবণতা শিক্ষার্থীদের মূল উদ্দেশ্য, অর্থাৎ পড়াশোনা থেকে তাদের মনোযোগেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ক্লাসের মূল্যবান সময় নষ্ট করে, অথবা বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার সময়টুকু ব্যবহার করে এই ধরনের ভিডিও তৈরির প্রচেষ্টা তাদের একাডেমিক জীবন থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্যুত করছে।
Read more: স্কুল ইউনিফর্মের মর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন, ছাত্র-ছাত্রীদের নতুন ‘ডিজিটাল বিলাসিতা’বিষয়টি এই প্রথম নয়, পূর্বেও একাধিক বার ছাত্রছাত্রীদের স্কুল ইউনিফর্ম পরিধানে নানা মধুর গানের তালে এবং কখনও কখনও ভিন্নরকম অঙ্গভঙ্গিতে তৈরি রিলস সামাজিক ও সংবাদ মাধ্যমে উঠে এসেছিল, যা বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। এই ধরনের ভিডিওর সংখ্যা এবং ব্যাপকতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিষয়টি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে।
অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও। একাধিক মহল থেকে জানা যাচ্ছে যে, বিদ্যালয়ের একাংশ ছাত্রছাত্রী নিয়ম লঙ্ঘন করে ক্লাস চলাকালীন বা ক্লাসের ফাঁকে মোবাইল ফোন বিদ্যালয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং মোবাইল হাতে ফটো তোলা ও রিলস শুটে মত্ত থাকছে। অভিযোগ উঠেছে যে, বারবার এমন ঘটনা প্রকাশ্যে আসা সত্ত্বেও, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে কোনও কঠোর বা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না, যার ফলে ছাত্রছাত্রীরা আরও বেশি করে এই ধরনের কাজে উৎসাহিত হচ্ছে।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোবাইল ফোন ব্যবহারের উপর সঠিক নজরদারির অভাব কেন? এবং প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে এই ধরনের শৃঙ্খলাভঙ্গকারী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না কেন? শিক্ষা এবং মূল্যবোধের উপর এই ডিজিটাল অনুপ্রবেশের প্রভাব কমাতে অভিভাবক, শিক্ষক এবং প্রশাসনের সম্মিলিতভাবে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। এই বিষয়ে পরবর্তী খবরের দিকে আমাদের নজর থাকবে।








