ব্রিটিশ মিউজিয়াম ও আসাম সরকারের মধ্যে ‘লেটার অফ ইন্টেন্ট’ স্বাক্ষর; মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার উপস্থিতিতে আসামের পবিত্র ঐতিহ্যের প্রতীক বৃন্দাবনী বস্ত্র বিশেষ বিধি সহ সীমিত সময়ের জন্য আনা হবে দেশে।
আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি, লন্ডনঃ বিশ্ব ইতিহাসের অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের স্মৃতি ধারণ করে রাখা লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়াম মানবসভ্যতার অন্যতম বিরল সংগ্রহশালা হিসেবে সুবিখ্যাত। যুগে যুগে সঞ্চিত অমূল্য শিল্পকর্ম, সাংস্কৃতিক নিদর্শন ও প্রাচীন সভ্যতার অবশিষ্টাংশের সাক্ষ্য বহন করে এই মিউজিয়ামটি বিশ্বজুড়ে ইতিহাসপ্রেমী, গবেষক ও পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।

এই ঐতিহাসিক স্থানে আজ রচিত হলো এক নতুন অধ্যায়—যা আসামের জনগণের জন্য গর্বের, আবেগের এবং ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারের অনন্য মুহূর্ত। আজ ব্রিটিশ মিউজিয়ামে উপস্থিত ছিলেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, এবং তাঁর উপস্থিতিতেই অনুষ্ঠিত হলো আসাম সরকার ও ব্রিটিশ মিউজিয়ামের মধ্যে যুগান্তকারী ‘লেটার অফ ইন্টেন্ট’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান।
এই চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আসামের সর্বাধিক বিরল, মূল্যবান ও আধ্যাত্মিক সম্পদ—বৃন্দাবনী বস্ত্র—সীমিত সময়ের জন্য আসামে নিয়ে আসা হবে। দীর্ঘদিন বিদেশের মাটিতে সংরক্ষিত থাকলেও এখন তা ফিরছে তার নিজস্ব পরিচয়ের মাটিতে, তার ইতিহাসের কোলে।

মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এই চুক্তিকে ‘চিরস্মরণীয় দিন’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন—
“আমাদের জমির একটি অমূল্য ঐতিহ্য ফিরে আসে যেখানে এটি সত্যিই আছে। বৃন্দাবনী বস্ত্র ফেরত আসা শুধু সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ নয়, এটি আমাদের আত্মপরিচয়ের পুনঃপ্রতিষ্ঠা।”
ব্রিটিশ মিউজিয়াম পক্ষের বক্তব্য অনুযায়ী, মূল্যবান এই সম্পদটি কঠোর নিরাপত্তা বিধি ও নির্দিষ্ট শর্তের অধীনে প্রদর্শনের জন্য আসামে প্রেরণ করা হবে। এটি হবে একটি সীমিত সময়ের প্রদর্শনী, যেখানে হাজার হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ করতে পারবেন শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের ভক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীকী এই ঐতিহ্য।

বৃন্দাবনী বস্ত্র শুধুমাত্র একটি বস্ত্র নয়—
এটি আসামের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার,
শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের দর্শন,
ভক্তি আন্দোলনের চেতনা এবং সমাজ সংস্কারের যুগান্তকারী সূচনার সার্থক স্মৃতি।
লেটার অফ ইন্টেন্ট স্বাক্ষরের এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত ব্রিটিশ মিউজিয়ামের ঋণ ব্যবস্থার আওতায় সম্পন্ন হয়েছে, যা আসামের কালজয়ী অতীতের সঙ্গে বর্তমান প্রজন্মের সংযোগ আরও দৃঢ় ও মর্মস্পর্শী করে তুলবে। আসামের মানুষের জন্য এটি এক গর্বের উপলক্ষ—যেখানে তাদের ঐতিহ্য, তাদের আধ্যাত্মিক শেকড় ফিরে আসছে নিজের মাটিতে।

আজকের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতীয় ও আসামি জনগণের মধ্যে আনন্দ ও গর্বের আবেগ ছড়িয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এটি নিঃসন্দেহে এক অসামান্য অগ্রগতি।








