দীর্ঘদিনের শারীরিক নির্যাতনের জের! রবিবার ভোরে উদ্ধার হলো স্ত্রীর রক্তাক্ত দেহ; ঘটনাস্থলে পশ্চিম জেলার পুলিশ সুপার সহ বিশাল বাহিনী, অভিযুক্ত স্বামী গ্রেপ্তার।
আমতলী, ত্রিপুরাঃ ত্রিপুরার বুকে আরও একবার এক লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটল। রবিবার ভোরে আমতলী থানার অন্তর্গত রানির খামার ঝরঝরিয়া এলাকা সাক্ষী থাকল এক নজিরবিহীন পারিবারিক হিংসার করুণ পরিণতির। অভিযোগ, দীর্ঘদিনের পারিবারিক অশান্তি এবং শারীরিক নির্যাতনের জেরে স্ত্রীকে অত্যন্ত নৃশংসভাবে খুন করেছেন তারই স্বামী। এই ঘটনায় গোটা এলাকায় এক তীব্র চাঞ্চল্য ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।
দীর্ঘদিনের পারিবারিক অশান্তি ও নিগ্রহের অভিযোগ
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত গৃহবধূর নাম আদরি সরকার। অভিযুক্ত স্বামীর নাম সেন্টু সরকার। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সেন্টু সরকার প্রায়শই তুচ্ছ কারণে-অকারণে তাঁর স্ত্রী আদরিকে মারধোর করতেন এবং লাগাতার শারীরিক নির্যাতন চালাতেন। এই পারিবারিক কলহ ও অশান্তি ঝরঝরিয়া এলাকার নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে উঠেছিল।
শনিবার রাতের বচসা ও হত্যাকাণ্ড
অন্যান্য দিনের মতোই শনিবার রাতেও সেন্টু সরকারের সাথে তাঁর স্ত্রী আদরী সরকারের তীব্র ঝগড়া ও বচসা হয়। মনে করা হচ্ছে, সেই পারিবারিক বিবাদই চরম পরিণতি পায় গভীর রাতে, যখন সেন্টু সরকার তাঁর স্ত্রীকে অত্যন্ত নৃশংসভাবে হত্যা করে। তবে ঠিক কী উপায়ে এবং কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে, তা এখনও পুলিশের তদন্তসাপেক্ষ।
সন্ত্রস্ত এলাকাবাসীর তৎপরতা ও অভিযুক্তকে আটক
রবিবার ভোরে স্থানীয় এলাকার বাসিন্দারা আদরী সরকারের নিথর, রক্তাক্ত দেহ ঘরের আশেপাশে পড়ে থাকতে দেখে আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। এমন ভয়াবহ দৃশ্য দেখে দ্রুত তাঁরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন এবং সন্দেহের বশে অভিযুক্ত স্বামী সেন্টু সরকারকে আটক করতে সক্ষম হন। কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার আগেই সতর্ক এলাকাবাসীরা দ্রুত আমতলী থানায় খবর দেন।
ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশ বাহিনী
খবর পেয়ে দ্রুত আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক (ওসি) পরিতোষ দাস সহ বিশাল সংখ্যক পুলিশ ও টি এস আর বাহিনী ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের গুরুত্ব বিচার করে ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছন পশ্চিম জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার (এসপি) আইপিএস নমিত পাঠক এবং আমতলীর এসডিপিও পারমিতা পান্ডে। উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকদের এই উপস্থিতি ঘটনার গুরুত্বকে যেমন তুলে ধরে, তেমনই পুলিশি তৎপরতাও বৃদ্ধি করে।
দেহ উদ্ধার, গ্রেপ্তার ও আইনি প্রক্রিয়া
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহত আদরী সরকারের মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য হাঁপানিয়া হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। পাশাপাশি, স্থানীয়দের হাতে আটক থাকা অভিযুক্ত স্বামী সেন্টু সরকারকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। আমতলী থানার পুলিশ এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট ধারায় একটি খুনের মামলা নথিভুক্ত করে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করেছে। থানা সূত্রে খবর, ময়না তদন্তের পর আদরী সরকারের মৃতদেহ তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে। অভিযুক্ত স্বামী সেন্টু সরকারকে আমতলী থানার পুলিশ সোমবার আদালতে প্রেরণ করবে বলে জানা গেছে। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গোটা ঝরঝরিয়া এলাকায় শোকের পাশাপাশি তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে এবং এলাকাবাসীর তরফ থেকে অভিযুক্ত সেন্টু সরকারের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী উপযুক্ত ও কঠোরতম পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানানো হয়েছে।








