জুলাইবাড়ি আর ডি ব্লকের অন্তর্গত উত্তর জুলাইবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব কাকুলিয়া এলাকার ঘটনা। লাউ ক্ষেত পরিদর্শনে প্রধান, উপ-প্রধান সহ বিশিষ্ট সমাজসেবীরা; বিচার ও সাহায্যের দাবি।
জুলাইবাড়ী, ত্রিপুরা । ২১ অক্টোবর ২০২৫ঃ আমাদের সমাজে এখনও এমন কিছু মানুষ রয়েছেন, যারা নিজেদের কোনো সৃষ্টিশীলতা বা কর্মক্ষমতা না থাকলেও, অন্যের কঠোর পরিশ্রমের ফসলকে ধ্বংস করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেন না। “নিজে কিছু করব না, অন্যকেও করতে দেব না”—এই সংকীর্ণ, নেতিবাচক মানসিকতার শিকার হয়ে আজ এক অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং হৃদয়বিদারক ঘটনার সাক্ষী হলো জুলাইবাড়ি আর ডি ব্লকের অধীন উত্তর জুলাইবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত পূর্ব কাকুলিয়া এলাকা।
পূর্ব কাকুলিয়া এলাকার বাসিন্দা রাখাল নম। তাঁর জীবন কাটে চরম দারিদ্র্যের সাথে নিরন্তর সংগ্রাম করে। তাঁর একমাত্র ছেলে সঞ্জীব নম-কে সাথে নিয়ে তিনি অন্যের জমি লিজ নিয়ে কোনোমতে সবজি চাষ করে অতি কষ্টে সংসার নির্বাহ করেন। নিজস্ব কোনো জমিজমা না থাকায়, এই লিজ নেওয়া জমিতে চাষ করাই তাঁদের পরিবারের অন্ন সংস্থানের একমাত্র পথ। প্রচণ্ড রৌদ্রের মধ্যেও প্রতিদিন ঘাম ঝরিয়ে, অত্যন্ত যত্নের সাথে তাঁরা লাউ, কুমড়ো সহ বিভিন্ন প্রজাতির সবজি ফলান, যা বিক্রি করেই চলে তাঁদের সংসার। একজন কৃষকই বোঝেন, তাঁর ফসলের প্রতি কতখানি আত্মিক টান থাকে।
রাখাল নম বা তাঁর ছেলে সঞ্জীব নম, কেউই কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত নন। এমনকি কারোর সাথে তাঁদের কোনো ঝগড়া বা বিবাদও নেই। সম্পূর্ণ নিরুপদ্রব এবং শান্ত জীবনযাপনকারী এই কৃষক পরিবারের উপর রাতের আঁধারে নেমে এলো নির্মম আঘাত। কোনো এক বা একাধিক দুষ্কৃতী গভীর রাতে গোপনে প্রবেশ করে তাঁদের সম্পূর্ণ লাউ ক্ষেতটিকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়। সবজির লতাগুলি কেটে দেওয়া হয় এবং ফলন নষ্ট করে দেওয়া হয় ইচ্ছাকৃতভাবে।
আজ সকালে রাখাল নম তাঁর প্রাণের চেয়ে প্রিয় ফসল দেখতে গিয়ে দেখেন— তাঁর সকল স্বপ্ন, আশা এবং বিগত দিনের কঠোর পরিশ্রম নিমেষের মধ্যে মাটিতে মিশে গেছে। লাউ ফসল সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে গেছে দেখে তিনি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি, ঘটনাস্থলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তাঁর এই কান্না কেবল ফসলের ক্ষতির জন্য নয়, তা যেন দারিদ্র্যের সাথে নিরন্তর সংগ্রাম করা এক পিতার বুকফাটা আর্তনাদ।
এমন মর্মান্তিক খবর শোনামাত্রই আজ সকালে সঞ্জীব নম-এর সবজি ক্ষেত পরিদর্শনে ছুটে আসেন উত্তর জুলাইবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান গোপাল বৈদ্য ও উপ-প্রধান মিটন সাহা। এছাড়া বিশিষ্ট সমাজসেবী মানষ ভৌমিক, প্রবীর দেবনাথ প্রমুখ সহ এলাকার অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারটির পাশে দাঁড়ান। তাঁরা রাখাল নম ও সঞ্জীব নম-কে সান্ত্বনা দেন এবং দুষ্কৃতীদের এই অমানবিক কাজের তীব্র নিন্দা করেন।
কৃষিভিত্তিক এই সমাজে, যখন একজন অতি দরিদ্র কৃষক এত কষ্টের পরেও শুধুমাত্র সংকীর্ণ মানসিকতার শিকার হন, তখন সমাজের বিবেক যেন প্রশ্নের মুখে দাঁড়ায়। দ্রুত এই দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করার পাশাপাশি, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারটিকে সরকারিভাবে দ্রুত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে পাশে দাঁড়ানোর দাবি জানিয়েছেন প্রধান, উপ-প্রধান সহ স্থানীয় বিশিষ্টজনেরা।








