দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণ রাখতে রাজ্য পুলিশের বিশেষ তৎপরতার অংশ হিসেবে আমতলীতে একাধিক জায়গায় অভিযান; গ্রেপ্তার এক পাচারকারী, মামলা দায়ের।
আগরতলা, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ঃ শারদীয়া দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে রাজ্য জুড়ে যখন উৎসবের আবহ, তখন ঠিক তার মধ্যেই শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে ত্রিপুরা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট। পুজোর আনন্দে কেউ যেন মাদক বা মদের নেশায় বুঁদ হয়ে সমাজের পরিবেশ নষ্ট না করে, সেজন্য রাজ্যের প্রায় প্রতিটি থানায় চলছে মতবিরোধী বিশেষ অভিযান।
এই ধারাবাহিকতায়, মহাষষ্ঠীর সন্ধ্যায় আমতলী থানার পুলিশ এক বড়সড় সাফল্যের মুখ দেখল। রবিবার সন্ধ্যায় আমতলী থানার ওসি পরিতোষ দাসের নেতৃত্বে, থানার সেকেন্ড অফিসার মৃণাল কান্তি পাল, অন্যান্য অফিসার ও TSR-এর সঙ্গীয় দল একাধিক এলাকায় চালান বিশেষ অভিযান।
প্রথম অভিযান চালানো হয় মহেশখলা এলাকায় অবস্থিত ইন্দ্রজিৎ দেবনাথের বাড়িতে। সেখান থেকেই উদ্ধার হয় বিপুল পরিমাণে অবৈধ বিলেতি মদ। এরপর পরপর অভিযান চলে হাঁপানিয়া এলাকায়, যেখানে সমীর ঘোষের বাড়ি থেকেও মদ মজুদের তথ্য আসে পুলিশের হাতে। দুটি ক্ষেত্রেই অবৈধভাবে মদ সংরক্ষণের প্রমাণ পাওয়া যায়, যা আইনত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
তবে এখানেই থেমে থাকেনি পুলিশ। গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে, একই দিন সন্ধ্যায় ওএনজিসি ব্যাংক চৌমুহনী সংলগ্ন আগরতলা-সাব্রুম জাতীয় সড়কের পাশ থেকে TR-01-E-1762 নম্বরের একটি বুলেরো পিকআপ গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ বিলেতি মদ। গাড়িটি ছিল মালবাহী, যাতে অবৈধভাবে চোরাচালান করে আনা হচ্ছিল এই মদ।
এই ঘটনায় পুলিশ গাড়িচালক মনীশ দেবকে ঘটনাস্থলেই গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে আমতলী থানায় একটি নির্দিষ্ট ধারায় মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এই মদ পাচারচক্র দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় ছিল এবং দুর্গাপূজার সময় শহরে এই মদ ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল।
এরপর সোমবার, মহাসপ্তমীর দুপুরে আমতলী থানার ওসি পরিতোষ দাস এক সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে গোটা ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন। তিনি জানান, উদ্ধারকৃত মদের আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৫ লক্ষ টাকা, যা এই ধরনের অভিযানের ক্ষেত্রে বড়সড় সাফল্য হিসেবে ধরা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, “নেশা-মুক্ত ত্রিপুরার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমতলী থানার পুলিশ বিগত দিনগুলোতেও এই ধরনের মদবিরোধী অভিযান চালিয়ে এসেছে। তবে এইবার দুর্গাপূজায় কোনোভাবেই শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হতে দেওয়া হবে না। আমরা কঠোর নজরদারিতে রয়েছি এবং এই ধরনের অবৈধ কার্যকলাপে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”
স্থানীয়দের মতে, পুলিশের এই ধরনের পদক্ষেপ দুর্গোৎসবকে শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের পক্ষে অত্যন্ত ইতিবাচক। তারা বলছেন, “পুজোর আনন্দে নেশা ঢুকলেই শুরু হয় অশান্তি। পুলিশ যেভাবে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে, তাতে আমরা নিশ্চিন্তে উৎসব উপভোগ করতে পারছি।”
রাজ্য জুড়ে চলমান এই বিশেষ তৎপরতার মধ্যে আমতলী থানার এই অভিযান নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। দুর্গাপূজার দিনগুলোতে শান্তি বজায় রাখতে পুলিশ প্রশাসনের এই ধরণের সক্রিয়তা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলেই আশা।








