সামাজিক মাধ্যম যে কিভাবে সমাজের দর্পণ হয়ে উঠতে পারে এবং অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অন্যতম হাতিয়ার হতে পারে, তার আরও একবার প্রমাণ মিলল দক্ষিণ ত্রিপুরায়। মনসা পূজার আগে বাজারে শাপলা ও পদ্মফুল বিক্রি করতে থাকা দুটি শিশুর ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই তাদের সাহায্যে এগিয়ে এল অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ। এক নিমেষে বদলে গেল দুটি শিশুর भविष्य। বিস্তারিত জানাচ্ছেন শান্তির বাজার থেকে আমাদের প্রতিনিধি বাহাদুর ত্রিপুরা।
শান্তির বাজার, ত্রিপুরা। রিপোর্ট-বাহাদুর ত্রিপুরাঃ “মানবতার এখনও বেঁচে আছে” – এই প্রবাদটিকেই বাস্তবে রূপ দিল অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের সদস্যরা। ঘটনাটি দক্ষিণ জেলার বরপাথরী এলাকার। বিগত দুই দিন পূর্বে, মনসা পূজার ঠিক আগে, বরপাথরী বাজারে দুটি দুঃস্থ শিশুকে শাপলা এবং পদ্মফুল বিক্রি করতে দেখা যায়। তাদের মলিন মুখ এবং জীবিকার জন্য এই কঠিন লড়াইয়ের ছবি কেউ একজন ক্যামেরাবন্দী করে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করলে তা দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়।
এই মর্মস্পর্শী ছবিটি নজরে আসে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের কার্যকর্তাদের। তারা কালবিলম্ব না করে ওই শিশুদের খোঁজে বরপাথরী বাজারে যান এবং তাদের সঙ্গে কথা বলেন। শিশু দুটি জানায়, তাদের নাম রাহুল পাল ও রাজু পাল এবং তারা সম্পর্কে আপন ভাই। রাহুল বরপাথরী সোনাপুর দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে এবং ছোট ভাই রাজু একই বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করে।
বিষয়টির গভীরতা অনুধাবন করে, বিদ্যার্থী পরিষদের এক প্রতিনিধি দল গতকাল তাদের বাড়িতে পৌঁছায়। সেখানে গিয়ে তারা পরিবারের চরম দারিদ্র্যের বাস্তব চিত্রটি দেখতে পান। একটি ভাঙাচোরা জীর্ণ ঘরে তাদের বসবাস, যেখানে ঠিকমতো মাথা গোঁজারও পরিস্থিতি নেই। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলে এবং তাদের করুণ অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে বিদ্যার্থী পরিষদের সদস্যরা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের একটি বিস্তারিত তালিকা তৈরি করেন।
কথার সঙ্গে কাজের মিল রেখে, আজ বিদ্যার্থী পরিষদের পক্ষ থেকে এক মহতী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। বরপাথরী সোনাপুর দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে রাহুল পাল ও রাজু পালের হাতে তুলে দেওয়া হয় তাদের পড়াশোনার জন্য যাবতীয় সামগ্রী। এর মধ্যে ছিল নতুন স্কুল ইউনিফর্ম, জুতো, খাতা-কলম, পেন্সিল বক্সসহ সমস্ত প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ।
শুধু তাই নয়, তাদের পরিবারের দুর্দশা লাঘবের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রীও প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ছিল চাল, ডাল, তেল, বিভিন্ন ধরনের মসলা, সাবান, বিস্কুটসহ অন্যান্য শুকনো খাবার, দুধ এবং পরিধানের জন্য নতুন বস্ত্র। এই সমস্ত জিনিস হাতে পেয়ে দুই ভাইয়ের চোখেমুখে যে আনন্দের ঝলক দেখা যায়, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।
উপস্থিত বিদ্যার্থী পরিষদের কার্যকর্তারা প্রতিশ্রুতি দেন যে, এটি সাহায্যের শুরু মাত্র। আগামী দিনে রাহুল এবং রাজুর পড়াশোনা যাতে কোনোভাবেই দারিদ্র্যের কারণে মাঝপথে থেমে না যায়, তা তারা সুনিশ্চিত করবেন। তাদের পড়াশোনার সমস্ত দায়িত্বভার গ্রহণ করার আশ্বাস দেন তারা। পাশাপাশি, ভবিষ্যতেও এই পরিবারটির পাশে থেকে সর্বতোভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করেন। বিদ্যার্থী পরিষদের এই মানবিক উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকার আপামর জনসাধারণ। সামাজিক মাধ্যমের একটি ছবি যে দুটি শিশুর জীবনে এমন ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে, তা এককথায় নজিরবিহীন।








