
খোয়াই নদীর ভয়াল ভাঙনে কৃষিজমি ও ঘরবাড়ি নদীগর্ভে, প্রশাসনের নীরবতা নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে জনতা।
খোয়াই, ৫ জুন২০২৫: ত্রিপুরার খোয়াই জেলায় খোয়াই নদীর তীব্র ভাঙনে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে টানা বর্ষণ এবং নদীর স্রোতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় নদীর তীরবর্তী বহু কৃষি জমি ও ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এলাকার বহু পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। তারা মানবেতর অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো—এই সংকটময় পরিস্থিতিতেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি, যা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

খোয়াই নদীসংলগ্ন এলাকাগুলি, বিশেষ করে রাজনগর, পুরাননগর, শিলঘর ও সংলগ্ন গ্রামগুলিতে নদীর ভাঙন এতটাই প্রবল যে, দিনে দিনে মাটির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে চাষের জমি, বাড়িঘর, এমনকি গ্রামের রাস্তা পর্যন্ত। এলাকার প্রবীণ বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত কয়েক দশকে এত ভয়াবহ ভাঙনের দৃশ্য তারা দেখেননি। বহু কৃষক পরিবার তাঁদের একমাত্র জীবিকা—চাষের জমি হারিয়ে পথে বসতে বাধ্য হচ্ছেন।
একজন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার তিন বিঘা জমি এক রাতের মধ্যেই নদীর পেটে চলে গেছে। সরকার শুধু আশ্বাস দেয়, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না।” একই সঙ্গে আরও অনেকেই জানান, ভাঙনের আশঙ্কায় তারা রাতে ঘুমাতে পারছেন না, সব সময় মনে হচ্ছে ঘরভিটা কখন ধসে পড়ে নদীতে মিশে যাবে।
এই পরিস্থিতিতে এলাকার মানুষ প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ দাবি করছেন। তাঁরা চাইছেন—অতিসত্বর নদী তীর সংরক্ষণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হোক, ভাঙন রোধে পাথরের বাঁধ তৈরি হোক এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হোক। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন এখনো পর্যন্ত পরিদর্শন বা আশ্বাস ছাড়া কার্যত কিছুই করেনি বলে অভিযোগ উঠছে।
পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, এলাকাবাসীরা প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তাকে ‘নীরব সহিংসতা’ বলে আখ্যায়িত করছেন। এভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই আরও বহু পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ত্রিপুরা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে এই ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিতে পারে এবং আরও বড় মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন।