
ত্রিপুরার পূর্ব চানমারি এলাকায় ঘটল এক হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা। নির্মাণাধীন ভবনের গর্তে জমে থাকা পানিতে ডুবে মারা গেল একই পরিবারের দুইটি নিষ্পাপ শিশু — ভাই ও বোন। পুরো এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। কেবল পরিবার নয়, শোকস্তব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারাও এমন করুণ মৃত্যুকে মেনে নিতে পারছেন না।
ত্রিপুরা, ১৮ মে ২০২৫ঃ ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব চানমারির ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সামনের নির্মাণাধীন এলাকায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ভবনের পাশে দীর্ঘদিন ধরে একটি নির্মাণ কাজ চলছিল। নির্মাণস্থলের সামনে একটি গভীর গর্ত খনন করা হয়, যেখানে রীতিমতো জল জমে ছিল। গর্তটি ছিল খোলা ও অনিরাপদ, যার চারপাশে কোনও সুরক্ষা ব্যবস্থা বা সতর্কীকরণ চিহ্ন ছিল না। ঠিক এই প্রাণঘাতী গর্তই কেড়ে নেয় দুইটি কোমল প্রাণ।
মৃত শিশুরা একই পরিবারের সদস্য — এক ভাই এবং এক বোন। তাদের পরিবার গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। শিশুদের পিতা কৃষ্ণ দেবনাথ চোখের জলে ভেসে জানান,
“গতকাল সকাল থেকেই আমি আমার ছেলে-মেয়েকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। সম্ভাব্য সব জায়গায় খুঁজেছি। ভাবিনি এভাবে ওদের খুঁজে পাব।”
অনুসন্ধান চালানোর পর আজ সকালে স্থানীয় বাসিন্দারা গর্তের পানিতে ভেসে থাকা দুটি মরদেহ দেখতে পান। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠায়।
নির্মাণস্থলের অব্যবস্থাপনা ঘিরে ক্ষোভ

স্থানীয়দের অভিযোগ, ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পাশে দীর্ঘদিন ধরে চলা নির্মাণকাজটি যথাযথ নিরাপত্তা ছাড়াই চালানো হচ্ছিল। শিশুদের চলাফেরা করা এলাকায় খোলা গর্ত রাখা সম্পূর্ণ অবহেলার পরিচায়ক। এলাকাবাসীর প্রশ্ন — “নির্মাণ কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতার জন্যই কি আজ দুটি শিশুকে প্রাণ হারাতে হলো?”
এই মর্মান্তিক ঘটনার পর এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা অবিলম্বে দায়ীদের শাস্তির দাবি জানান এবং নির্মাণ সাইটে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত চলছে। গাফিলতির অভিযোগে সংশ্লিষ্ট নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিশুদের মৃত্যুর কারণ এবং সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
একটি সামান্য সতর্কতাহীনতা দুইটি নিষ্পাপ শিশুর জীবন কেড়ে নিয়েছে। পূর্ব চানমারির এই ঘটনা শুধুই একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি প্রশাসনিক অবহেলার একটি করুণ প্রতিচ্ছবি। প্রশ্ন উঠছে — শিশুদের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব কি কেবল পরিবারের, না কি পুরো সমাজেরও?