
ত্রিপুরার রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন তিপ্রা মথার সুপ্রিমো প্রদ্যুৎ বিক্রম মানিক্য দেববর্মা। কিছুদিন আগে এক সাংবাদিক বৈঠকে বা সাক্ষাৎকারে তিনি মন্তব্য করেন যে, “আমি সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে চলি, শুধুমাত্র সিপিআই(এম)-এর সঙ্গে নয়।” তাঁর এই বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন তোলে।

সামাজিক মাধ্যমে ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ এই বক্তব্যকে “নৈতিক বিভাজন” ও “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলেও আখ্যায়িত করেন। এদিকে, ত্রিপুরা রাজনীতির অন্যতম প্রবীণ এবং অভিজ্ঞ মুখ, সিপিআই(এম) পলিটব্যুরোর সদস্য ও প্রাক্তন মন্ত্রী জীতেন্দ্র চৌধুরী কড়া ভাষায় তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
প্রদ্যুতের এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জীতেন্দ্র চৌধুরী বলেন,
“মানিক্যবাবুর এই বক্তব্য অত্যন্ত দুঃখজনক ও বিভ্রান্তিকর। তিনি যদি সত্যিই জনগণের অধিকারের জন্য লড়াই করেন, তবে তাঁকে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হবে। সিপিআই(এম) এমন একটি দল, যারা যুগের পর যুগ ধরে আদিবাসীদের জন্য সংগ্রাম করেছে। আজকের আধুনিক ADC ও স্বশাসিত ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে বামফ্রন্টের ঐতিহাসিক ভূমিকার উপর ভিত্তি করেই। অথচ সেই বামপন্থীদেরই তিনি একঘরে করার কথা বলছেন।”
তিনি আরও বলেন,
“এই ধরণের একপাক্ষিক ও অবিবেচিত মন্তব্যে আদিবাসী জনসমাজ বিভ্রান্ত হতে পারে। কিন্তু যারা সত্যিকার অর্থে জনগণের পাশে আছে, তারা জানে সিপিআই(এম) কখনোই স্বার্থপর রাজনীতি করেনি। আমরা জাতি, ধর্ম, সম্প্রদায়ের বিভাজনের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। তিপ্রা মথা যদি বাস্তবিক অর্থে জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করতে চায়, তবে তারা বিভাজনের রাজনীতি না করে ঐক্যের পথে হাঁটুক।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রদ্যুৎ বিক্রম মানিক্যের এই ধরণের মন্তব্যের পেছনে কৌশলগত অবস্থানগত কারণ থাকতে পারে। রাজ্যে বিজেপি ও কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর দলের সম্পর্ক অনেক সময়েই বন্ধুত্বপূর্ণ দেখা গেছে, যদিও তিনি বারবার তিপ্রা মথাকে নিরপেক্ষ আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। তবে শুধুমাত্র সিপিআই(এম)-এর ক্ষেত্রে এমন সুস্পষ্ট বিরূপ মন্তব্য রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ ও দূরত্বের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তবে স্থানীয় জনগণ, বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষ অনেকেই মনে করেন, “যারা সত্যিকার অর্থে গ্রাসরুট পর্যায়ে মানুষের জন্য কাজ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে এভাবে কথা বলা ন্যায্য নয়।”
ত্রিপুরার রাজনীতিতে তিপ্রা মথা এক শক্তিশালী আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। তবে রাজনীতিতে ব্যক্তিগত সম্পর্ক নয়, আদর্শ ও জনসম্পৃক্ততা কতটা কার্যকরভাবে তুলে ধরা হচ্ছে সেটিই গুরুত্বপূর্ণ। প্রদ্যুৎ বিক্রম মানিক্যের মন্তব্য এবং তার প্রেক্ষিতে সিপিআই(এম)-এর কড়া প্রতিক্রিয়া আগামী দিনে ত্রিপুরার রাজনীতিতে নতুন উত্তাপ তৈরি করতে পারে।