
দক্ষিণ ত্রিপুরার জোলাইবাড়ী বিধানসভা কেন্দ্রের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত জোলাইবাড়ী স্কুল সহ মোট তিনটি বিদ্যালয়, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা ক্ষেত্রে তাদের সুনাম অটুট রেখে চলেছে। এই বিদ্যালয়গুলির গৌরবময় ইতিহাসে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল ও বিভিন্ন উচ্চপদস্থ পেশাজীবীদের জন্ম হয়েছে। তবে বর্তমানে এক অস্বস্তিকর সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে এখানকার ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকবৃন্দকে।
জোলাইবাড়ী, দক্ষিণ ত্রিপুরা। ১৬ মে ২০২৫ঃ বিদ্যালয় থেকে মাত্র ডিলছুড়া দূরত্বে অবস্থিত একটি সরকারি অনুমোদিত মদের কাউন্টার শিক্ষার পরিবেশে গুরুতর বিঘ্ন ঘটাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দিন দিন সেই পরিবেশ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ছাত্রছাত্রীরা সরাসরি সংবাদমাধ্যমের দ্বারস্থ হয়েছে, তাদের পড়াশোনার স্বাভাবিক পরিবেশ রক্ষার দাবিতে।
অভিযোগ অনুযায়ী, প্রতিদিন বিদ্যালয়ের আশেপাশে মদ্যপানরত ব্যক্তিরা ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে অশালীন মন্তব্য করছেন। মেয়েদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা আরও জটিল রূপ নিচ্ছে বলে জানান বিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রী। শুধু তাই নয়, নেশাগ্রস্ত ব্যক্তিরা প্রায়শই পরিত্যক্ত মদের বোতল বিদ্যালয় চত্বরে ছুড়ে ফেলে দেন, যার ফলে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও মনোযোগ উভয়ই বিঘ্নিত হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের একাধিক অভিভাবক ও শিক্ষক জানিয়েছেন, এরকম একটি পরিবেশে শিশুরা মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে। বারংবার প্রশাসনের কাছে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ জানানো হলেও এখনও পর্যন্ত কোনও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ।
এই পরিস্থিতিতে এলাকার বিশিষ্ট সমাজসেবী সত্যজিৎ বিশ্বাসের নেতৃত্বে বিদ্যালয়ের একদল ছাত্রছাত্রী একত্রিত হয়ে সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে জনমত গঠনের পথে পা বাড়িয়েছে। তাঁদের স্পষ্ট দাবি, তারা কাউন্টার বন্ধ করতে বলছে না, বরং এটি যেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির আশেপাশের এলাকা থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়, যেখানে ছাত্রছাত্রীদের চলাচল ও শিক্ষার পরিবেশে এর প্রভাব না পড়ে।
সত্যজিৎ বিশ্বাস বলেন,
“আমরা রাজ্য সরকারের রাজস্ব প্রাপ্তির বিরুদ্ধে নই, কিন্তু এমন স্থানে মদের কাউন্টার থাকা উচিত নয় যেখানে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যালয় রয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষার পথ রুদ্ধ করে দিলে সমাজই তার মূল্য চোকাবে।”
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, যদি আগামী কিছুদিনের মধ্যে প্রশাসন কোনও কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তবে তারা বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটবে। স্থানীয়দের মতে, ছাত্রছাত্রীদের এই সচেতনতা ও প্রতিবাদ আজকের সমাজে এক উদাহরণ হয়ে থাকবে। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন এই গণদাবির প্রতি কী প্রতিক্রিয়া জানায় এবং শিক্ষার স্বার্থে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও তাদের আশেপাশের পরিবেশ কেমন হওয়া উচিত। ছাত্রছাত্রীদের সুরক্ষা ও মনঃসংযোগের জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণই এখন সময়ের দাবি।