
জোলাইবাড়ী প্রতিনিধিঃ ত্রিপুরার শান্তির বাজার মহকুমার অন্তর্গত জোলাইবাড়ী এলাকায় সোমবার সকাল থেকে শুরু হয় এক চরম জনবিক্ষোভ। পুরাতন জোলাইবাড়ী মোটরস্ট্যান্ড সংলগ্ন শুভ্রজিৎ পোদ্দারের মালিকানাধীন পেট্রোলপাম্পের সামনে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভে সামিল হন স্থানীয় যানচালকরা। দাবির মূল কেন্দ্রবিন্দু— বিশুদ্ধ পানীয়জল।
প্রচণ্ড গরমে জেরবার সাধারণ মানুষ, যানচালক ও পাশ্ববর্তী দুটি বিদ্যালয়ের শতাধিক ছাত্রছাত্রী প্রতিদিন এই পেট্রোলপাম্প থেকেই ঠান্ডা জল সংগ্রহ করে। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, পাম্পে সরবরাহ করা এই জল আয়রনযুক্ত এবং দীর্ঘদিন ধরে তা পান করার ফলে বহু মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে এর প্রভাব গুরুতর রূপ নিচ্ছে বলে স্থানীয়দের দাবি।
বিক্ষোভকারীদের একাংশ জানান, দীর্ঘদিন ধরে তারা এই সমস্যার কথা পাম্প কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে আসছেন। বহুবার অভিযোগ জানানো হলেও, মালিকপক্ষ এ বিষয়ে কার্যত নিরুত্তর। পাম্পের ম্যানেজার স্বীকার করেছেন যে জল আয়রনযুক্ত, তবে তার বক্তব্য, “এই সমস্যা আমরা মালিকদের জানিয়েছি। তারা আগরতলা থেকে এই পেট্রোলপাম্পটি পরিচালনা করেন।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রশ্ন—”যেখানে প্রতিদিন শত শত মানুষ এই জল ব্যবহার করে, সেখানে এমন অনিরাপদ জল সরবরাহ করা কি আদৌ মানবিক?” তাদের অভিযোগ, শুভ্রজিৎ পোদ্দারের মালিকানাধীন এই পাম্পে আগেও নানা ধরনের অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে। অপর একটি পেট্রোলপাম্প, যেটি এলাকাতেই অবস্থিত, সেখানে জনসাধারণ নির্ভরযোগ্য পরিষেবা পাচ্ছে বলে সকলে জানান। তুলনামূলকভাবে পোদ্দারের পাম্পে প্রতিনিয়ত গ্রাহক হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
বিক্ষোভের খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান জোলাইবাড়ী ফাঁড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খোকন চন্দ্র দাস। তাঁর হস্তক্ষেপে বিক্ষোভকারীরা সাময়িকভাবে কর্মসূচি থেকে সরলেও ক্ষোভ যে মিটে যায়নি, তা সকলেই স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন।
এক বিক্ষোভকারী যানচালক বলেন, “আজ শুধু সরেছি, কিন্তু সমস্যা সমাধান না হলে আগামি দিন বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো।”
সকলের নজর এখন প্রশাসনের দিকে। জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত এই সমস্যা কত দ্রুত সমাধান হয়, তা নিয়েই তৈরি হয়েছে জোর উদ্বেগ। স্থানীয়দের মতে, সরকারি হস্তক্ষেপ ছাড়া সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
একদিকে প্রচণ্ড গরম, অন্যদিকে বিশুদ্ধ জলের সংকট। তার ওপর অসহায় প্রশাসনিক প্রতিক্রিয়া—সব মিলে জোলাইবাড়ীবাসীর ধৈর্য আজ চরম সীমায় এসে ঠেকেছে। এখন দেখার বিষয়, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এবং মালিক পক্ষ কতটা দায়িত্বশীল ভূমিকা নেয় জনগণের জীবন ও স্বাস্থ্যের প্রতি।