
আগরতলা, ১৪ মে: ত্রিপুরার রাজনীতিতে চমকপ্রদ এক ঘটনা ঘটল সোমবার সন্ধ্যাবেলায়। তিপরা মথা পার্টির সুপ্রিমো ও প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা মহারাজা প্রদ্যুৎ কিশোর দেব্বর্মন আচমকাই উপস্থিত হন আগরতলার কংগ্রেস ভবনের সামনে। সাথে ছিল তার নিজস্ব গাড়ি এবং প্রায় ১০ হাজার কংগ্রেসের দলীয় পতাকা। এ দৃশ্য দেখে রীতিমতো হতবাক হয়ে যায় কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকরা। কংগ্রেস ভবনের সামনে পতাকা ফেরত দেওয়ার এই কর্মসূচি ঘিরে রাজনীতির অন্দরমহলে শুরু হয়েছে জল্পনার ঝড়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, প্রদ্যুৎ কিশোর দেব্বর্মন ২০২১ সালে কংগ্রেস ছেড়ে দেন এবং পরে গঠন করেন তিপরা মথা পার্টি। কিন্তু চার বছর পর হঠাৎ এত বিপুল সংখ্যক কংগ্রেস পতাকা ফেরত দেওয়ার অর্থ কী? এই প্রশ্ন এখন রাজনৈতিক মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি হতে পারে একধরনের রাজনৈতিক বার্তা, অথবা ত্রিপুরার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন সমঝোতার ইঙ্গিত।
এই ঘটনার পরেই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে কংগ্রেস বিধায়ক ও রাজ্যের অন্যতম অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ সুদীপ রায় বর্মন বলেন:

File Photo
“মহারাজা প্রদ্যুৎ কংগ্রেসেরই মানুষ। তিনি কংগ্রেস ছেড়েছিলেন রাজনীতির কারণে, কিন্তু তাঁর হৃদয়ে কংগ্রেস ছিল, আছে এবং থাকবে। DAN-এর অংশ কি না সেটা বড় বিষয় নয়। তিনি আমাদেরই লোক।”
সুদীপ বাবু আরও বলেন, “মহারাজার সঙ্গে আমার শুধু রাজনৈতিক সম্পর্ক নয়, আমাদের পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। কেবল বিজেপিই সেই দল যারা রাজনীতির জন্য ব্যক্তিগত সম্পর্ককেও ধ্বংস করে দিতে চায়। কিন্তু আমাদের রাজনীতিতে মানবিকতা ও সম্পর্ককেও গুরুত্ব দিতে হবে।”
তিনি প্রদ্যুৎ কিশোরের পতাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়টি সহজভাবে দেখার আহ্বান জানান। তাঁর মতে, এটি কোনও নাটক নয়, বরং এক ধরনের আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন যে প্রদ্যুৎ এখনো কংগ্রেসকে নিজের রাজনৈতিক শিকড় হিসেবে মানেন।
তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই ঘটনার পেছনে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক জোট বা সমঝোতার ইঙ্গিতও লুকিয়ে থাকতে পারে। বিশেষ করে ২০২6-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগেই রাজ্যে বিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে বৃহত্তর ঐক্যের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা চলছে, সেই প্রেক্ষাপটে এই ঘটনার তাৎপর্য আরও গভীর।
প্রদ্যুৎ কিশোর দেব্বর্মনের পতাকা ফেরত দেওয়া নিছক প্রতীকী ঘটনা নয় — এটি ত্রিপুরার রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে। আর সেই অধ্যায়ের নাম হয়তো হবে “একতা ও পুনর্মিলনের রাজনীতি”। এখন দেখার বিষয়, আগামী দিনে এই সম্পর্ক আরও গভীর হয় কি না এবং প্রদ্যুৎ আবার কংগ্রেসে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিরে আসেন কি না।