
বামুটিয়া, দূর্গাবাড়ী ৭ মে ২০২৫ঃ গত ৫ মে ২০২৫ তারিখ থেকে দূর্গাবাড়ী চা বাগানে শ্রমিকদের বেতন প্রদানের পদ্ধতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়। পূর্বে হাতে হাতে নগদে দেওয়া হলেও এখন থেকে সমস্ত বেতন অনলাইনের মাধ্যমে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা হচ্ছে। এই ব্যবস্থার ফলে প্রথম দিন থেকেই কিছু শ্রমিক সমস্যার মুখে পড়েন, বিশেষ করে যারা এখনও ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থায় অভ্যস্ত নন। বেতন পৌঁছাতে সময় লাগে কয়েক ঘণ্টা, যা শ্রমিকদের মধ্যে উদ্বেগ এবং হতাশার সৃষ্টি করে।
এই পরিস্থিতি চরমে ওঠে ৬ মে, যখন বেশ কিছু শ্রমিক অভিযোগ করেন যে তাদের বেতন এখনও ব্যাংকে পৌঁছায়নি। ক্ষোভে ফেটে পড়ে একাংশ শ্রমিক এবং তারা বাগানের প্রশাসনিক দপ্তরের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে শ্রমিকদের একটি অংশ বাগানের ম্যানেজার আশীষ অধিকারীর বিরুদ্ধে সরাসরি হুমকি প্রদান করে এবং মানসিকভাবে নিপীড়ন চালায়।

চা বাগানের পরিচালক হারাধন চন্দ্র দাস এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “আমরা আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে অনলাইন পেমেন্ট চালু করেছি। এতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমরা খতিয়ে দেখব, কিন্তু যেভাবে শ্রমিকদের মধ্যে থেকে কিছু উশৃঙ্খল ব্যক্তি ম্যানেজারকে হুমকি দিয়েছে এবং অপমান করেছে, তা কখনোই বরদাস্ত করা হবে না।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, এই ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক প্ররোচনা থাকতে পারে এবং সিপিআই(এম)-এর কিছু স্থানীয় নেতৃত্ব এই বিক্ষোভে পরোক্ষভাবে যুক্ত।
ম্যানেজার আশীষ অধিকারী বলেন, “আমাদের ওপর উপরমহলের আদেশ আছে, সমস্ত পেমেন্ট এখন থেকে অনলাইনে হবে। আমি শুধু নির্দেশ পালন করেছি। কিন্তু ওইদিন কিছু শ্রমিক মদ্যপ অবস্থায় এসে গালিগালাজ, হুমকি ও অপমান করে। এটা খুবই দুঃখজনক।”
সূত্র জানায়, এই ঘটনায় শ্রমিক বাবুল তাঁতী ও গকুল তাঁতী সরাসরি ম্যানেজারকে হুমকি দেন এবং তাকে অপমান করেন। বর্তমানে বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের নজরে এসেছে এবং তদন্ত শুরু হয়েছে। বাগান কর্তৃপক্ষ শ্রমিক ইউনিয়ন ও প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে স্থানীয় সমাজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, প্রযুক্তির অগ্রগতির পথে হাঁটা জরুরি হলেও তার বাস্তব প্রয়োগের আগে শ্রমিকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা দরকার ছিল। অন্যদিকে, কেউ কেউ মনে করছেন, কিছু রাজনৈতিক দল শ্রমিক অসন্তোষকে হাতিয়ার করে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করতে চাইছে।