
আগরতলা, ১৬ই এপ্রিল ২০২৫: ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেসের ডাকে আজ দুপুরে রাজ্য রাজনীতিতে উত্তেজনার পারদ আরও কিছুটা চড়ল, যখন রাজধানী আগরতলার দূর্জয়নগরে অবস্থিত এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED) কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত হয় এক জোরালো বিক্ষোভ কর্মসূচি। সময় ছিল দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট। বিক্ষোভস্থলে উপস্থিত ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি আশিষ কুমার সাহা, যুব কংগ্রেস সভাপতি নীলকমল সাহা, প্রাক্তন মন্ত্রী ও বর্তমান কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন, সিনিয়র কংগ্রেস নেতা গোপাল রায়সহ রাজ্য কংগ্রেসের একঝাঁক নেতাকর্মী।
প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব এই বিক্ষোভ কর্মসূচির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রিত ED-র ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে। তাঁদের অভিযোগ, বর্তমান বিজেপি সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে ব্যবহার করছে এবং বিরোধী দলগুলির গণতান্ত্রিক প্রতিবাদ কণ্ঠরোধ করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। নেতাদের মতে, দেশজুড়ে ED, CBI-এর মত সংস্থাগুলিকে ভয় ও হুমকির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা একাধিপত্যবাদী রাজনীতির স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি।

বিক্ষোভস্থলে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কংগ্রেস সভাপতি আশিষ কুমার সাহা বলেন, “আজ দেশের প্রতিটি কোণে বিজেপি বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করতে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি ব্যবহার করা হচ্ছে। ত্রিপুরাও তার ব্যতিক্রম নয়। ED-র নামে ভয় দেখিয়ে রাজনৈতিক মাঠ থেকে বিরোধী দলগুলিকে সরিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাতে এখানে এসেছি। জনগণ সব দেখছে, সময় এলে তার জবাবও দেবে।”
কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন আরও একধাপ এগিয়ে বলেন, “যে সংস্থাগুলি এক সময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ত, আজ তারা নিজেই ক্ষমতাসীন দলের হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছে। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় চলা এই প্রতিষ্ঠানগুলি যেন আজ রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার। আমরা এই অপব্যবহারের বিরুদ্ধে রাজপথে থাকব।”

বিক্ষোভে যুব কংগ্রেস সভাপতি নীলকমল সাহাও সরব হন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, “আজ যুবসমাজ কর্মসংস্থান, শিক্ষার অধিকার, ও সামাজিক ন্যায়ের জন্য পথে নেমেছে। অথচ সরকার চায়, এই প্রতিবাদ ধ্বংস হোক। তাই ED নামক ছায়াতলে এক আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে।”
বিক্ষোভে প্রচুর সংখ্যক কংগ্রেস কর্মী উপস্থিত ছিলেন, যাঁরা পোস্টার, ব্যানার ও স্লোগানের মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। “ED হঠাও, গণতন্ত্র বাঁচাও”, “বিজেপির দালালি চলবে না”, “ত্রিপুরা চায় শান্তি ও ন্যায়ের রাজনীতি”— এই ধরনের স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে দূর্জয়নগরের রাজপথ।
প্রসঙ্গত, বিগত কয়েকমাস ধরেই রাজ্যে ED-এর তৎপরতা বেড়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতানেত্রীর উপর নজরদারি চালানো, তলবপত্র পাঠানো এবং তদন্তের নামে মানসিক চাপ সৃষ্টি করার অভিযোগ বারবার উঠে এসেছে। কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছে, এইভাবে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে এবং গনতান্ত্রিক পরিসর সংকুচিত করছে।
আজকের বিক্ষোভ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হলেও, কংগ্রেস নেতৃত্ব জানিয়েছে যে, তারা এ ধরনের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি আগামী দিনেও ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যাবে। তাঁদের মতে, “গণতন্ত্র বাঁচাতে হলে রাজপথেই লড়াই করতে হবে।”
