
আগরতলা, ১৬ এপ্রিল: সারা ভারত সেভ এডুকেশন কমিটি (AISEC) আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে নববর্ষের প্রীতি ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করার পাশাপাশি জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০-এর বিরুদ্ধে একগুচ্ছ যুক্তিনির্ভর অভিযোগ তুলে ধরা হয়। AISEC-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই শিক্ষানীতি দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে ভয়াবহ বিপর্যয়ের ইঙ্গিত বহন করছে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে AISEC-এর বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকার দেশের শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী বা সংসদীয় বিতর্ক উপেক্ষা করে কেবল মন্ত্রীসভার সিদ্ধান্তে এই নীতিটি চাপিয়ে দিয়েছে। এই নীতিকে দেশের শিক্ষার ইতিহাসে এক ভয়ানক বিপথগামী পদক্ষেপ বলে বর্ণনা করা হয়। বক্তাদের দাবি, এটি ভারতের নবজাগরণের পথিকৃৎ রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ, জ্যোতিবা ফুলে, পি সি রায় প্রমুখ মনীষীদের শিক্ষাদর্শের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
AISEC অভিযোগ করে, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০-র বাস্তবায়নে শিক্ষার বেসরকারিকরণ, বাণিজ্যিকীকরণ ও সাম্প্রদায়িকীকরণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। কেন্দ্রীয় বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব বহুদিনের হলেও, তা নামিয়ে আনা হয়েছে মাত্র ২.৫ শতাংশে, যা GDP-র মাত্র ৩ শতাংশ।
বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়, শিক্ষা কেন্দ্রীয়করণের লক্ষ্যে UGC-এর খসড়া রেগুলেশন ২০২৫ এবং NTA-এর মাধ্যমে পরিচালিত CUET, NEET, NET-এর মতো সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষাগুলি নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের কাছে প্রবল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও, তিন বছরের স্নাতক কোর্সের পরিবর্তে চার বছরের কোর্স চালু করায় ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের উপর বাড়তি আর্থিক বোঝা চাপানো হচ্ছে।
ত্রিপুরা রাজ্যের প্রসঙ্গ টেনে AISEC জানায়, ‘বিদ্যাজ্যোতি’ প্রকল্পের মাধ্যমে ৫১১টির বেশি স্কুল ধাপে ধাপে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে এবং ১২৫টি স্কুলকে ত্রিপুরা বোর্ড থেকে CBSE-তে স্থানান্তর করা হয়েছে অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীদের মতামত ছাড়াই। স্কুলগুলিতে ইংরেজি মাধ্যমে পাঠদান চালু করা হলেও প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো বা শিক্ষক নেই। এর ফলে শিক্ষার মান অবনতির মুখে।
AISEC দাবি করে, এই নীতির ফলে “শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে এবং নিম্ন আয়ের পরিবারগুলি বেসরকারি স্কুলের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।”
AISEC-এর দাবিসমূহঃ
১. জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ সম্পূর্ণ বাতিল
২. সার্বজনীন, গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও বৈজ্ঞানিক শিক্ষার রূপায়ণ
৩. শিক্ষার জন্য বাজেটে ১০% ও জিডিপি-র ৬% বরাদ্দ
৪. IKS-এর নামে বিজ্ঞান ও ইতিহাস বিকৃতি বন্ধ
৫. ত্রিপুরায় বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্প বাতিল
৬. স্থায়ী শিক্ষকের পর্যাপ্ত নিয়োগ
৭. শিক্ষার স্বাধিকার বজায় রাখা ও কেন্দ্রীকরণ বন্ধ
৮. ৩ বছরের স্নাতক কোর্স পুনরায় চালু
AISEC একটি বিকল্প শিক্ষানীতির খসড়া (Draft People’s Alternative Education Policy) তৈরি করেছে, যা আগামী ৯ মে, বিশ্বকবির জন্মজয়ন্তীতে, দেশের প্রতিটি রাজ্য রাজধানী শহর থেকে একযোগে প্রকাশ করা হবে। এরপর কয়েক মাস জুড়ে দেশজুড়ে মতামত সংগ্রহ চলবে এবং ডিসেম্বর ২০২৫-এ ব্যাঙ্গালোরে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় জনগণের সংসদে (National People’s Parliament) এই খসড়াকে চূড়ান্ত করা হবে।
এই বিকল্প শিক্ষানীতির ভিত্তিতেই AISEC কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির উপর চাপ সৃষ্টি করবে, যাতে একবিংশ শতকের উপযোগী, সকলের জন্য সমানভাবে গ্রহণযোগ্য শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হয়।