
নিউজ ডেস্কঃ ত্রিপুরার তেলিয়ামুড়া থানা কর্তৃপক্ষের ব্যর্থ পরিচালনার ফলস্বরূপ এক অবিশ্বাস্য পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ যখন নিজের এলাকা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ, তখন সমাজের নৈতিক অবক্ষয় এক নতুন পর্যায়ে পৌঁছেছে। সম্প্রতি তেলিয়ামুড়া মহকুমা হাসপাতালের ভেতরে নিয়মিতভাবে বসে যাচ্ছে মাদক সেবীদের আসর, যা একদিকে পুলিশের নৈতিক দায়িত্বের প্রতি প্রশ্ন তোলে, অন্যদিকে জনমনে তৈরি করেছে গভীর উদ্বেগ।

শুক্রবার, তেলিয়ামুড়া মহকুমা হাসপাতালের বেসরকারি নিরাপত্তা রক্ষীরা একটি অপ্রত্যাশিত অভিযান পরিচালনা করেন, যেখানে হাসপাতালের বিল্ডিংয়ের ভিতরে চলছিল বাংলা মদের আসর। নিরাপত্তা রক্ষীরা সঙ্ঘবদ্ধভাবে মাদক সেবনকারীদের ধরা শুরু করেন, যা আদতে পুলিশের কাজ হওয়া উচিত ছিল। জনমনে এবার প্রশ্ন উঠছে, যখন পুলিশের দায়িত্বহীনতার কারণে এমন ঘটনা ঘটছে, তখন রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা কতটা বিপন্ন হতে পারে।
পুলিশের অব্যবস্থাপনা এবং তেলিয়ামুড়া থানা এলাকার মাদকমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখার ব্যর্থতার কারণে স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এমনকি, তেলিয়ামুড়া মহকুমা হাসপাতালের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এই ধরনের অপরাধের মহোৎসব সমাজের অবক্ষয়ের চিত্রকে ফুটিয়ে তুলেছে। অভিযোগ উঠেছে, এলাকার পুলিশ এই ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না, এবং নৈতিকভাবে দায়বদ্ধ থাকা সত্ত্বেও পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালনে বিলম্ব করছে।
এদিকে, তেলিয়ামুড়া মহকুমা হাসপাতালের ভেতরে মাদক সেবীদের কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা সেবার মান নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, যখন তারা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসেন, তখন তাদের সামনে মাদক সেবনের দৃশ্য দেখা যায়, যা হাসপাতালের পরিবেশকে অশান্ত করে তোলে। এই পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে হাসপাতালের বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মীরা একাধিকবার পুলিশকে অভিযোগ জানালেও, কোন কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
নেতৃত্বের অবহেলায় অস্থির হয়ে ওঠা জনগণ এখন প্রশ্ন করছে, ত্রিপুরার রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের ‘নেশামুক্ত ত্রিপুরা’ গড়ার স্বপ্ন কি শুধুই একটি কল্পনা হয়ে থাকবে? রাজ্যের যুব সমাজকে মাদকমুক্ত করতে এবং নৈতিকভাবে দুর্বল এলাকাগুলোর সংস্কারের ক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপ কতটা কার্যকর, তা নিয়ে মানুষ যথেষ্ট সন্দিহান।
এদিকে, সচেতন মহল মনে করছেন, তেলিয়ামুড়া থানার দায়িত্বে থাকা ইন্সপেক্টর রাজীব দেবনাথের মত একজন পুলিশ অফিসার যদি থানার দায়িত্বে থাকেন, তাহলে এমন পরিস্থিতি হয়তো ভবিষ্যতেও ঘটতে থাকবে। পুলিশ কর্মকর্তাদের সঠিক নেতৃত্ব এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্ব না দেওয়ার ফলে গোটা রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলার যে অবস্থা হতে পারে, তা নিয়ে জনমনে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
এই অবস্থায়, তেলিয়ামুড়া থানার আধিকারিকদের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা বাড়ছে যে তারা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং হাসপাতালসহ এলাকা জুড়ে মাদকসেবনের সমস্যা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। এই পরিস্থিতি যদি অব্যাহত থাকে, তবে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, বিশেষত মাদকবিরোধী কার্যক্রমে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।