ধলাই জেলার সংস্কৃত ভারতী সংগঠনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে গীতার মাহাত্ম্য, আধ্যাত্মিক জাগরণ, এবং সমাজে সংস্কৃত শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিশদ আলোচনা। উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ ও দুই শতাধিক দর্শনার্থী।
নিউজ ডেস্ক । ৫ ডিসেম্বর ২০২৫ঃ ধলাই জেলার কমলপুরে আজ অনুষ্ঠিত হলো গীতা জয়ন্তী মহোৎসব—যা অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লপক্ষের মোক্ষদা একাদশী উপলক্ষে প্রতি বছর আয়োজিত একটি আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক উৎসব। কুরুক্ষেত্রের পবিত্র ভূমিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কর্তৃক অর্জুনকে প্রদানকৃত অমৃত জ্ঞানের স্মরণে দেশব্যাপী যে গীতা জ্ঞান উৎসব পালিত হয়, তারই অংশ হিসেবে সংস্কৃত ভারতী ত্রিপুরা প্রান্তের ধলাই জেলা শাখার উদ্যোগে আজকের এই মহা-আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানের সূচনালগ্নে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃত ভারতীর ত্রিপুরা প্রান্তের সংগঠন মন্ত্রী শ্রী বিক্রম বিশ্বাস মহাশয়, কমলপুর সরকারি মহাবিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের অতিথি অধ্যাপক শ্রী দেবর্ষী নমঃশূদ্র মহাশয়, এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন শ্রী কৃষ্ণ দেবনাথ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনার গুরু দায়িত্ব পালন করেন সংস্কৃত ভারতীর কর্মী শ্রী শুভ্রজিৎ নমঃশূদ্র ও শ্রীমতী পম্পী শুক্ল বৈদ্য।
অনুষ্ঠানের সূচনা হয় অতিথিদের সৌজন্য বরণ, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন এবং মাতৃদেবী সরস্বতীর চরণে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের মধ্য দিয়ে। পরে ধারাবাহিকভাবে পরিবেশিত হয় সরস্বতী বন্দনা, ধ্যেয় মন্ত্র ও উদ্বোধনী সংগীত—যা কমলপুরের আকাশ বাতাসে বয়ে আনে এক বিশেষ আধ্যাত্মিক আবহ।
সংস্কৃত ভারতীর ধলাই জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা—পম্পী শুক্ল বৈদ্য, স্মৃতি মালাকার, দীপা মালাকার, সন্দীপা চৌধুরী এবং শুভ্রজিৎ নমঃশূদ্র—অনুষ্ঠানের সার্বিক পরিচালনায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।
স্বাগত ভাষণে শ্রীমতী পম্পী শুক্ল বৈদ্য গীতার মাহাত্ম্য ও সমাজে এর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে গভীর আলোচনা করেন। তিনি বলেন, আধুনিক জীবনের সংকটময় পরিস্থিতিতে গীতা মানুষের মানসিক বল তৈরি করে এবং নৈতিক শক্তিকে জাগ্রত করে।
মুখ্য অতিথি শ্রী বিক্রম বিশ্বাস তাঁর বক্তব্যে বলেন—
“গীতা শুধু পূজার আসনে রাখার পবিত্র গ্রন্থ নয়; বরং এটি আমাদের জীবনযাত্রার পথপ্রদর্শক। সংস্কৃত ভাষায় গীতা অধ্যয়ন করলে আমরা এর প্রকৃত তাত্পর্য বুঝতে পারি।”
তিনি আজকের যুবসমাজকে সংস্কৃত শিক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

শ্রী কৃষ্ণ দেবনাথ তাঁর বক্তব্যে গীতা পাঠের গুরুত্ব ও নিত্য অধ্যয়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। এরপর অধ্যাপক দেবর্ষী নমঃশূদ্র বলেন—
“গীতা শুধুমাত্র পড়লেই হবে না, এর বাণী আমাদের হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। তবেই আভ্যন্তরীণ পরিবর্তন সম্ভব।”
অনুষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে গীতা বিতরণ পর্ব। মোট ১৩ জন শিক্ষার্থীকে গীতা প্রদান করা হয়, যাতে নতুন প্রজন্মের মধ্যে সংস্কৃত ভাষা ও গীতার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। পরে সংস্কৃত ভারতীর কর্মীরা সম্মিলিতভাবে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার দ্বাদশ অধ্যায়—‘ভক্তিযোগ’—পাঠ করেন।
শেষে কার্যক্রম পরিচালক শ্রী শুভ্রজিৎ নমঃশূদ্র ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং বলেন—
“আজ আমরা সংস্কৃত কম জানার কারণে নিজেদের ধর্মীয় শিকড় সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণায় বিশ্বাস করি। তাই সংস্কৃত শিক্ষাকে বাধ্যতামূলকভাবে শিখে নিজেদের ধর্ম ও সংস্কৃতিকে রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য।”
পুরো অনুষ্ঠানে প্রায় দুই শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। মহোৎসবের শেষে ছিল সকলের জন্য প্রসাদের ব্যবস্থা। উচ্ছ্বাস, ভক্তি ও সাংস্কৃতিক আবহে ভরপুর এই গীতা জয়ন্তী মহোৎসব সফলভাবে সম্পন্ন হয়।








