সেক্রেটারীর খুনের রক্তমাখা স্মৃতি পেরিয়ে সহানুভূতির সাহচর্যে এগিয়ে চলেছে ‘ভারত রত্ন সংঘ’; ক্লাব সম্পাদক চন্দন চক্রবর্তীর মানবিক ভূমিকা প্রশংসিত।
ঊষাবাজার, ত্রিপুরা । ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ঃ পূজোর সময় এলেই গোটা অঞ্চলের নজর থাকে একটিই ক্লাবের দিকে—‘ভারত রত্ন সংঘ’। প্যান্ডেল হোক বা প্রতিমা, আলোকসজ্জা হোক বা সামাজিক বার্তা—সব দিক থেকেই নজর কাড়ে এই ক্লাব। তবে এবছর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু শুধুই প্যান্ডেলের শৈল্পিকতা নয়, বরং এক করুণ হত্যাকাণ্ড এবং তারপরে জন্ম নেওয়া এক অসাধারণ মানবিক সম্পর্ক।
ভারত রত্ন সংঘ ক্লাবের প্রাক্তন সেক্রেটারী দুর্গা প্রসন্ন দেব, যাঁকে সবাই ভিকি নামে চিনতেন, তিনি এক আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। আততায়ীকে পুলিশ দ্রুত গ্রেফতার করে আদালতে তোলে, এবং বর্তমানে সে জেল হেফাজতে রয়েছে। তবে এই ঘটনায় কেবল একজন ক্লাব কর্মীর প্রাণহানি ঘটেনি, বিপন্ন হয়ে পড়ে একটি গোটা পরিবার। ভিকির মৃত্যুর পর তাঁর পরিবার হয়ে পড়ে একেবারে অচল—নেই কোনো রোজগারের উৎস, স্ত্রী রীতিমতো দিন গুজরান করছিলেন অনাহারে-অর্ধাহারে।

এমন সময়েই সামনে আসেন ক্লাবের বর্তমান সম্পাদক চন্দন চক্রবর্তী। জানা যায়, তিনি শুধু পাশে দাঁড়াননি, বরং একপ্রকার ছায়ার মত পরিবারটির দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। গ্রামবাসীদের সূত্রে খবর, ভিকির বন্ধক রাখা বাড়ির কাগজপত্র একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে ১১ লক্ষ টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে এনে তিনি হস্তান্তর করেন ভিকির স্ত্রীর হাতে। এই সাহায্যই নয়, ভিকির স্ত্রী ও সন্তানের প্রতিমাসের যাবতীয় খরচও তিনি নিজ হাতে বহন করে চলেছেন এখনো পর্যন্ত।
এ নিয়ে News 9-এর সাংবাদিক যখন সরাসরি প্রশ্ন করেন—”আপনি যদি একদিন ক্লাব সম্পাদক না থাকেন, তখন কী হবে? কে দেখবে ওই পরিবারকে?”—চন্দনবাবুর উত্তর ছিল নীরবতা। প্রায় ৬ সেকেন্ড চুপ থেকে, চোখে এক দৃঢ়তা নিয়ে তিনি বলেন:
“আমি সম্পাদক থাকি বা না থাকি, ভিকির পরিবারকে যতটা পারি, নিজ সাধ্যমতো সহযোগিতা করে যাবো।”
সবশেষে এখন

একদিকে হিংসার রক্তাক্ত ছায়া, অন্যদিকে নিঃস্ব পরিবারকে ঘিরে এক অসাধারণ মানবিক গল্প। এই দুই বিপরীত স্রোতের মাঝে দাঁড়িয়ে ‘ভারত রত্ন সংঘ’ আজও আলোচনায়—দুঃখজনক হত্যার জন্য যেমন, তেমনি এক উজ্জ্বল সহানুভূতির নিদর্শনের জন্যও।
মানবিকতা হারিয়ে যায়নি, শুধু খুঁজে পাওয়ার অপেক্ষা—চন্দন চক্রবর্তীর কাজ সেই কথাই আবারও মনে করিয়ে দিলো।








