
“ছাউনি ফুটো, বেড়া ভাঙা – ফটিকছড়ার অঙ্গনওয়াড়ি স্কুল যেন অবহেলার প্রতীক”
ফটিকছড়া, ৬ জুন ২০২৫: সরকারি নথিতে “শিক্ষা সবার অধিকার” বলা হলেও বাস্তব চিত্র যেন ভিন্ন কথা বলে। ফটিকছড়া শিবির এলাকার একমাত্র অঙ্গনওয়াড়ি স্কুল আজ অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্কুল ভবনের দৈন্যদশা ও জরাজীর্ণ কাঠামো শিশু শিক্ষার মৌলিক অধিকারের উপর সরাসরি আঘাত হেনেছে।
বর্ষার এই সময়ে বিদ্যালয়ের টিনের ছাউনি একাধিক জায়গায় ছিদ্র হয়ে পড়ায় শ্রেণিকক্ষ রীতিমতো জলকাদায় পরিণত হয়েছে। কোথাও ছাউনির ফাঁক দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে, আবার কোথাও একেবারে ছিদ্র হয়ে গিয়েছে—যেখান দিয়ে বৃষ্টির পানি ঠিক যেন বালতির ধারায় ঢুকে পড়ছে শ্রেণিকক্ষে। এমন অবস্থায় বই-খাতা তো ভিজছেই, ভিজে যাচ্ছে কোমলমতি শিশুদের শরীরও।
পড়াশোনা নয়, বরং ঠাণ্ডা না লেগে দিনটা পার করা যেন এখন তাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন অবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। যদিও স্কুলের দায়িত্বে থাকা দিদিমণি একাধিকবার বিষয়টি স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রতিনিধি, সুপারভাইজার ও প্রশাসনিক মহলে জানিয়েছেন, তবে বাস্তবে আজও মেলেনি কোনো কার্যকরী উদ্যোগ বা স্থায়ী সমাধান।
একের পর এক অভিযোগের পর অবশেষে এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে চরম অসন্তোষ। শিশুদের এমন দুরাবস্থা ও বিদ্যালয়ের করুণ চিত্র আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের চাপ ও সংবাদমাধ্যমের নজরে আসার পর খবরটি পৌঁছায় এলাকার বিধায়ক নয়ন সরকারের কাছে।
তিনি তড়িঘড়ি স্কুলটি পরিদর্শনে যান এবং চোখের সামনে বিদ্যালয়ের করুণ চিত্র দেখে বিস্মিত হন। শিশুদের মাথার ওপর দিয়ে পানি পড়ছে, বেড়ার কোনও স্থায়িত্ব নেই, বসার উপযুক্ত স্থান নেই—এই সবই স্বচক্ষে দেখে বিধায়ক সাংবাদিকদের বলেন:
“এই অবস্থা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। শিশুদের জন্য এমন পরিবেশে পড়াশোনা করা মানে তাদের স্বাস্থ্যের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আগামী এক থেকে দুই দিনের মধ্যে স্কুল ভবনের জরুরি মেরামতের কাজ শুরু হবে।”
বিধায়কের এই আশ্বাসে আপাতত খানিকটা স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন অভিভাবক ও এলাকাবাসী। তবে প্রশ্ন উঠেছে—এই প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবায়িত হবে? কবে শিশুরা একটি নিরাপদ ও সম্মানজনক শিক্ষাব্যবস্থা পাবে?
স্থানীয়দের মত অনুযায়ী, “এই রকম পরিস্থিতি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। অস্থায়ী প্রতিশ্রুতি নয়, প্রয়োজন স্থায়ী অবকাঠামোগত উন্নয়ন। শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো আপস করা চলবে না।”
শিক্ষা যখন মৌলিক অধিকার, তখন ফটিকছড়ার এই চিত্র যেন আমাদের সংবিধান ও মানবতা—উভয়ের কাছেই এক নিরব অপমান। এখন শুধু দেখার অপেক্ষা, প্রশাসন তাদের কথায় কতটা স্থায়ী পদক্ষেপ নেয় এবং কোমলমতি শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ কত দ্রুত নিশ্চিত হয়।