
ভুয়া দলিল, প্রশাসনিক মদত ও জমি দখলের ষড়যন্ত্র— রাজারবানে ফুঁসে উঠছে সাধারণ মানুষ; মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইলেন ভুক্তভোগীরা।
রাজারবান, খয়েরপুর (ত্রিপুরা): রাজ্যের রাজধানীর একেবারে নিকটবর্তী অঞ্চল, বণিক্য চৌমুহনীর আর কে নগরের অন্তর্গত রাজারবান এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে চরম উত্তেজনা ও আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রায় ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বৈধ কাগজপত্র সহকারে বসবাস করে আসা ২০টি যৌথ পরিবার আজ চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয়ভাবে ‘জমির কারবারি’ হিসেবে কুখ্যাত কৃষ্ণ কমল লস্কর নামের এক ব্যক্তি ক্ষমতার অপব্যবহার করে জাল দলিলের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের বাসিন্দাদের উচ্ছেদের পরিকল্পনা করছে।
এই জমি দখলের চক্রান্তের কেন্দ্রে রয়েছে প্রায় ১২ কানি জমি, যা দীর্ঘদিন ধরে বসবাসকারী পরিবারগুলোর বসতভিটা হিসেবে পরিচিত। অভিযোগ অনুযায়ী, কৃষ্ণ কমল লস্কর নামে ওই ব্যক্তি কৌশলে জাল দলিল প্রস্তুত করে সম্পত্তিটি নিজের বোন জোসনা লস্করের নামে নামজারি করিয়েছেন। অথচ এই জমির বৈধ কাগজপত্র এবং পুরনো বসবাসের দলিল ওই ২০টি পরিবারের কাছেই রয়েছে।

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা চন্দ্রমোহন সরকার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“আমরা ১৯৬৬ সাল থেকে এই জমিতে ঘরবাড়ি করে বসবাস করছি। আমাদের কাছে রাজস্ব অফিস এবং অন্যান্য সরকারি দপ্তরের যাবতীয় নথি, কর পরিশোধের প্রমাণপত্র, পৌর অনুমোদন সবই আছে। তবুও আজ অন্যায়ভাবে আমাদের জমি হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। এটা কীভাবে সম্ভব যে আমাদের কাগজ থাকা সত্ত্বেও হঠাৎ করে নামজারিতে অন্য কারো নাম উঠে আসে?”
চন্দ্রমোহনবাবুর মতে, এই জালিয়াতির পেছনে ক্ষমতাসীন দলের একাংশের মৌন সমর্থন ও কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ সহযোগিতা রয়েছে। এই জমিতে বর্তমানে প্রায় ৭০ জনের অধিক সদস্যের বসবাস, যাঁরা সকলেই আতঙ্কিত এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
আরেক স্থানীয় যুবক সুমন সরকার বিস্ফোরক অভিযোগ করে বলেন,
“খয়েরপুর তহশিল অফিসের কিছু অসাধু কর্মচারী এই জমি দখলের ষড়যন্ত্রে সরাসরি জড়িত। এরা ঘুষের বিনিময়ে কৃষ্ণ কমল লস্করের হাতে বিভিন্ন সরকারি নথি জাল করতে সহায়তা করেছে।”
এমনকি স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, আদালতের স্থগিতাদেশ এবং ইঞ্জাংশন থাকা সত্ত্বেও অভিযুক্ত পক্ষ ও তার সহযোগীরা একাধিকবার চক্রান্ত করে উচ্ছেদের চেষ্টা চালিয়েছে। এর ফলে পরিবারগুলো এখন দিন-রাত আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা একত্রিত হয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন,
“আমরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সরাসরি অনুরোধ জানাই— দয়া করে আমাদের এই জীবন-মরণ পরিস্থিতিতে রক্ষা করুন। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কিন্তু এইভাবে যদি প্রশাসনই দুর্নীতিগ্রস্তদের পক্ষ নেয়, তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?”
এমতাবস্থায় রাজারবানবাসীরা প্রশাসনের প্রতি একটি শক্ত বার্তা দিয়েছেন— যদি দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত শুরু না হয়, এবং যদি এই অন্যায় বন্ধ না করা হয়, তবে তাঁরা বাধ্য হবেন বৃহত্তর গণআন্দোলনে নামতে।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আবারও প্রশ্ন উঠেছে, রাজ্য সরকার যতই সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিক না কেন, বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রশাসনের ভিতরে থাকা দুর্নীতিগ্রস্ত চক্র এখনও সাধারণ নাগরিকের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে বিপন্ন করে তুলছে।
এই ২০টি পরিবারের মধ্যে ৭৫ জনেরও বেশি মানুষ আজ তাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে লিপ্ত। আমরা গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের কাছে বিনীত অনুরোধ জানাই— দয়া করে আপনারা এই অনৈতিক দখলচেষ্টা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলুন। সংবাদ মাধ্যমের প্রভাবই পারে এই মানুষগুলোর ছাদ-ভিটে বাঁচাতে।