আগরতলা, ১২ নভেম্বর ২০২৪ঃ ত্রিপুরার জনগণ আজ এক কঠিন সংকটের সম্মুখীন। ২০১৮ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এবং ২০২৩ সালে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ডা: মানিক সাহা রাজ্যবাসীকে নেশামুক্ত ত্রিপুরা উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে, দুঃখজনকভাবে, সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে এখনও দৃশ্যমান
অগ্রগতি হয়নি। এর পাশাপাশি, রাজ্যে ড্রাগসের ভয়াবহ ব্যবসা দিন দিন আরও ব্যাপক হয়ে উঠছে, যা পুরো রাজ্যের যুব সমাজ এবং সাধারণ মানুষের জন্য এক চরম বিপদ সৃষ্টি করেছে। ড্রাগসের অবৈধ ব্যবসা বর্তমানে ত্রিপুরার শহর, শহরতলী, গ্রাম এবং পাহাড়—সবখানেই বিস্তার লাভ করেছে। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা, যুবক-যুবতীরা ক্রমাগত ড্রাগসের নেশায় আসক্ত হচ্ছে। এর ফলে সামাজিক অস্থিরতা, অপরাধ এবং স্বাস্থ্য সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে, শীড়াপথে ড্রাগস নেয়ার ফলে রাজ্যে এইডস রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সরকারের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। আগরতলার নন্দন নগর মসজিদ পাড়া থেকে শুরু করে বৃহত্তর আগরতলা পর্যন্ত ড্রাগস আসক্তির প্রভাব স্পষ্ট। একাংশ স্বার্থান্বেষী লোকেরা কাঁচা পয়সার লোভে ড্রাগস বিক্রি করে সমাজে বিশাল বিপর্যয় ডেকে আনছে। যদিও রাজ্য সরকার ড্রাগস কারবারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছে, তবুও প্রশাসনিক তৎপরতার অভাবে কার্যত এই অবৈধ বানিজ্য রোধ করা
সম্ভব হয়নি। এদিকে, সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার মান আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। শ্রমজীবী মানুষের আয়ের সঙ্গে সাথে তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের খরচও বেড়ে চলেছে। মূল্যবৃদ্ধির কারণে এসব পরিবার আর্থিক সংকটে পড়েছে। চিকিৎসা খরচ মেটানো, সন্তানদের পড়াশোনার খরচ বহন করা এবং বিদ্যুৎ-বিল বা রান্নার গ্যাসের বিল পরিশোধ করার মতো মৌলিক সমস্যাগুলোর মধ্যে প্রতিনিয়ত কষ্ট পাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, ত্রিপুরা মহিলা সংগ্রাম পরিষদের পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা কমিটি এক অতি জরুরি ঘোষণা দিয়েছে। সংগঠনের সম্পাদিকা রাবিয়া খাতুন এক বিবৃতিতে রাজ্য সরকারের কাছে ৮ দফা দাবি তুলে ধরেছেন। তার মতে, এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য রাজ্য সরকারকে কিছু জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. রাজাকে ড্রাগস মুক্ত করতে জরুরি ভিত্তিতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ।
২. প্রতিটি পাড়ায় ড্রাগসের ব্যবসা বন্ধ করতে ভিজিল্যান্স কমিটি গঠন।
৩. শ্রমজীবী মানুষের ঋণ মুকুব করা।
৪. এসসি, এসটি, ওবিসি এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষা ঋণ মুকুব করা।
৫. আয়কর বহির্ভূত পরিবারগুলোকে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ ও রান্নার গ্যাস সরবরাহ।
৬. সবার জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা চালু করা।
৭. প্রাথমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক করা।
৮. সকল স্তরে বেসরকারীকরণ বন্ধ করা।
এ সব দাবির বাস্তবায়নে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ত্রিপুরা মহিলা সংগ্রাম পরিষদ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
রাজ্যে পরিস্থিতি দিনের পর দিন খারাপ হতে থাকলে, সমাজের একাধিক স্তরের মানুষ জীবনের মৌলিক সুবিধাগুলো থেকেও বঞ্চিত হবে। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের দ্রুত পদক্ষেপের প্রয়োজন, যাতে জনগণের জীবনযাত্রার মান এবং সমাজের নিরাপত্তা পুনরুদ্ধার করা যায়।