পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৫৮ লক্ষ, রাজস্থান ও গোয়ায় ৭.৫ থেকে ৮.৫ শতাংশ ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে; মঙ্গলবার প্রকাশিত হচ্ছে খসড়া ভোটার তালিকা।
নিউজ ডেস্কঃ বিশেষ নিবিড় সংশোধন (Special Intensive Revision বা SIR)-এর দ্বিতীয় ধাপে থাকা পাঁচটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল—পশ্চিমবঙ্গ, রাজস্থান, গোয়া, পুদুচেরি এবং লক্ষদ্বীপ—এর খসড়া ভোটার তালিকা মঙ্গলবার প্রকাশ করতে চলেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, এই সংশোধনের ফলে লক্ষদ্বীপ বাদে বাকি সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ৭.৫ থেকে ৮.৫ শতাংশ পর্যন্ত ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ যেতে পারে।
সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়তে চলেছে পশ্চিমবঙ্গে। সূত্রের দাবি, এখানে প্রায় ৫৮ লক্ষ ভোটারের নাম খসড়া তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। এই ভোটারদের মধ্যে রয়েছেন—যাঁরা ইতিমধ্যেই মারা গেছেন, যাঁরা স্থায়ীভাবে অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়েছেন, যাঁদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না অথবা যাঁরা একাধিক জায়গায় ভোটার হিসেবে নথিভুক্ত ছিলেন। তবে এখানেই শেষ নয়। নির্বাচন কমিশন সূত্র জানাচ্ছে, যেসব ভোটার তাঁদের এনুমারেশন ফর্মে তথ্যগত অসঙ্গতি রেখেছেন, বিশেষ করে আগের SIR-এর ভোটার তালিকার সঙ্গে নিজেদের সংযোগ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেননি, তাঁদের কাছে পাঠানো নোটিসের সংখ্যা ৫৮ লক্ষের থেকেও অনেক বেশি হতে পারে। এই অসঙ্গতিগুলি ইতিমধ্যেই বুথ লেভেল অফিসাররা চিহ্নিত করেছেন।
উল্লেখযোগ্যভাবে, এবারের SIR প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম পরিবর্তন করা হয়েছে। ভোটার নিবন্ধনের সময় নাগরিকত্ব বা যোগ্যতার প্রমাণস্বরূপ নথি জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক আবেদন গ্রহণ করা হলেও, পরবর্তী যাচাইয়ে বড় সংখ্যায় অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। এখন যাঁদের নোটিস পাঠানো হবে, তাঁদেরকে নির্বাচন নিবন্ধন আধিকারিকদের কাছে উপযুক্ত নথি পেশ করে নিজেদের নাগরিকত্ব ও ভোটার হওয়ার যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে। সেই যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরেই চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে। গোয়া রাজ্যে, যেখানে মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ১১.৮ লক্ষ, সেখানে প্রায় ১ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ পড়তে পারে, যা মোট ভোটারের প্রায় ৮.৫ শতাংশ। অন্যদিকে, রাজস্থানে মোট ৫.৪৬ কোটি ভোটারের মধ্যে ৭.৫ থেকে ৮ শতাংশ ভোটারের নাম খসড়া তালিকা থেকে বাদ যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সবচেয়ে কম প্রভাব পড়বে লক্ষদ্বীপে। এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ৫৭,৮১৩, যার মধ্যে মাত্র ২.৫ শতাংশ ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, মৃত, স্থানান্তরিত ও একাধিকবার নথিভুক্ত ভোটারের সংখ্যা এত বেশি হওয়ার পিছনে ২০১০ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন (Representation of the People Act)-এর একটি সংশোধনী বড় ভূমিকা নিয়েছে। ওই সংশোধনী অনুযায়ী, যথাযথ যাচাই ছাড়া কোনও ভোটারের নাম সংশোধন বা বাদ দেওয়া যাবে না। যদিও এই যাচাই প্রক্রিয়া কীভাবে হবে, তা নির্ধারণ করার কথা ছিল পরবর্তী বিধিতে, কিন্তু বাস্তবে তা কখনও কার্যকরভাবে নির্ধারিত হয়নি। ফলে বছরের পর বছর ধরে মৃত ও ভুয়ো ভোটারের নাম তালিকায় থেকে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা ভুয়ো ভোটদানের আশঙ্কা বাড়িয়েছে। নির্বাচন কমিশন সূত্র জানাচ্ছে, খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর প্রতিটি জেলার জেলাশাসক বা কালেক্টর রাজনৈতিক দলগুলির জেলা স্তরের প্রতিনিধিদের হাতে তালিকার মুদ্রিত ও ডিজিটাল কপি তুলে দেবেন। পাশাপাশি, জেলা নির্বাচন আধিকারিকের ওয়েবসাইটেও এই খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হবে, যাতে সাধারণ মানুষ সহজেই তা যাচাই করতে পারেন। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকাকে আরও স্বচ্ছ, নির্ভুল এবং বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার লক্ষ্যে বড় পদক্ষেপ নিচ্ছে বলেই মনে করছেন প্রশাসনিক মহল।







