
কলকাতা, ৫ মার্চ: মেদিনীপুর কতোয়ালি মহিলা থানায় পুলিশি হেফাজতে নির্দয় অত্যাচারের শিকার হলেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ধর্মঘটের সমর্থক ছাত্রীরা। ৩ মার্চ রাজ্যে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ধর্মঘটের সমর্থন করতে গিয়ে পুলিশি হেফাজতে নৃশংস অত্যাচারের শিকার হন ছাত্রীরা। এ ঘটনায় ৫ মার্চ কলকাতায়, এআইডিএসও’র কেন্দ্রীয় দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে নৃশংসতার শিকার ছাত্রীরা তাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এবং দোষী পুলিশ অফিসারদের শাস্তির দাবি জানান।

এআইডিএসও’র রাজ্য সভাপতি মণিশঙ্কর পট্টনায়ক বলেন, “১ মার্চ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির চাকা পিষে দেওয়ার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে ৩ মার্চ ছাত্র ধর্মঘট অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠনের কর্মীরা সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের সমর্থনে পিকেটিং করছিলেন। এ সময় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের গুন্ডাবাহিনী ও পুলিশ যৌথভাবে আক্রমণ চালায়। বিনা প্ররোচনায় পুলিশ গ্রেপ্তার করে এবং গ্রেফতারের পর মহিলা সংগঠকদের ওপর পুরুষ পুলিশ সদস্যরা অশালীন আচরণ করে।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছাত্রীরা জানান, মেদিনীপুর মহিলা কতোয়ালি থানায় তাঁদের উপর পাশবিক অত্যাচার করা হয়। তারা বলেন, “গ্রেপ্তার করার পর থানায় মহিলা সংগঠকদের উপর অকথ্য অত্যাচার করা হয়। অ্যারেস্ট মেমোতে সই করানোর সময় হাতে এবং পায়ে জলন্ত মোমবাতির মোম গলিয়ে ফেলা হয়। একজন মহিলা কর্মীকে চারজন পুলিশ সদস্য বেল্ট দিয়ে পেটানো হয় এবং মুখে ভারী বুট দিয়ে আঘাত করতে থাকে।”

সংগঠনের নেতারা আরও বলেন, “এ ধরনের অত্যাচার গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিরোধী। পুলিশ প্রশাসনের এমন আচরণ শুধু আমাদের সংগঠনের কর্মীদের বিরুদ্ধে নয়, এটা সারা সমাজের বিরুদ্ধে আক্রমণ। আমরা পুলিশ প্রশাসনের এই বর্বর আচরণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং দোষীদের শাস্তির দাবি করছি।”
মণিশঙ্কর পট্টনায়ক আরও বলেন, “এ ধরনের আক্রমণ আমাদের সংগঠনের সদস্যদের ওপর নতুন নয়। দীর্ঘ ৭ দশকের সংগ্রামী ঐতিহ্যকে সামনে রেখে আমরা পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী ও গণতান্ত্রিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাব। এই ধরনের বর্বরতা গণতন্ত্রের জন্য এক গুরুতর আঘাত, এবং আমরা সকল গণতন্ত্রপ্রেমী নাগরিককে প্রতিবাদে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”
এআইডিএসও রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অনুমিতা পানি ও সুশ্রীতা সরেন জানান, “এমন বর্বর আক্রমণের শিকার হওয়া সত্ত্বেও আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব। এই নৃশংসতার বিরুদ্ধে আমরা সকল গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষকে একত্রিত করতে চাই।”

এই ঘটনায় মানবাধিকার কমিশন, মহিলা কমিশন ও রাজ্যের নাগরিক সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে এবং দোষীদের শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।