তেলিয়ামুড়ায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিপিআইএম পলিটব্যুরো সদস্য জিতেন চৌধুরী, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার সহ বিশিষ্ট নেতৃত্ববৃন্দ; তৎকালীন জাতিদাঙ্গার প্রেক্ষাপটে তপন চক্রবর্তীর আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন।
তেলিয়ামুড়া, ৩১শে আগস্ট: এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের শিকার, ভারতীয় যুব ফেডারেশনের (DYFI) যুব নেতা তপন চক্রবর্তীর ২৬তম শহীদান দিবস আজ গভীর শ্রদ্ধা ও ভাবগাম্ভীর্যের সাথে পালিত হলো। জাতি ও উপজাতিদের মধ্যে সম্প্রীতি রক্ষায় জীবন উৎসর্গকারী এই অকুতোভয় নেতার স্মরণে তেলিয়ামুড়া বিভাগীয় কমিটির উদ্যোগে ডিওয়াইএফআই (DYFI) এবং টিওয়াইএফ (TYF) যৌথভাবে এই কর্মসূচির আয়োজন করে। এদিন তেলিয়ামুড়ার সিপিআইএম কার্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা অসংখ্য মানুষ এবং সংগঠনের সদস্যরা ভিড় করেন।

এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) তথা সিপিআইএমের পলিটব্যুরো সদস্য ও রাজ্য সম্পাদক শ্রী জিতেন চৌধুরী। তাঁর সাথে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শ্রী মানিক সরকার, যিনি তপন চক্রবর্তীর আত্মত্যাগের গুরুত্ব তুলে ধরেন। এছাড়াও, যুব সংগঠনের রাজ্য কমিটির সম্পাদক শ্রী নবারুন দেব, সভাপতি শ্রী পলাশ ভৌমিক, খোয়াই বিধানসভার বিধায়ক শ্রী নির্মল বিশ্বাস, প্রাক্তন বিধায়ক শ্রী পবিত্র কর এবং সিপিআইএম তেলিয়ামুড়া মহকুমা কমিটির সম্পাদক শ্রী সুভাষ নাথ সহ অন্যান্য বরিষ্ঠ নেতৃবৃন্দ ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
২০০০ সালের ৩১শে আগস্টের সেই ভয়াবহ দিনটিকে স্মরণ করে বক্তারা জানান, প্রয়াত তপন চক্রবর্তী ও তাঁর সহকর্মীরা সেদিন কল্যাণপুর এলাকার বাগানবাজারের শান্তিনগর থেকে একটি শান্তি সভা শেষ করে ফিরে আসছিলেন। তৎকালীন সময়ে রাজ্যজুড়ে জাতি ও উপজাতির মধ্যে যে জাতিদাঙ্গার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, সেই সংকটময় মুহূর্তে শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা নিয়েই তাঁরা এই সভার আয়োজন করেছিলেন। খোয়াই নদীর খেয়াঘাটে ফেরার পথেই অতর্কিত আততায়ীর গুলিতে নৃশংসভাবে নিহত হন তরুণ যুব নেতা তপন চক্রবর্তী। এই মর্মান্তিক ঘটনার পর থেকেই প্রতি বছর ৩১শে আগস্ট দিনটিকে যুব সংগঠনসমূহ তপন চক্রবর্তীর শহীদান দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।

প্রতি বছরের ন্যায় এই বছরও সিপিআইএমের তেলিয়ামুড়া বিভাগীয় কার্যালয়ের সামনে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর তপন চক্রবর্তীর শহীদ বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও মাল্যদান করে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন উপস্থিত নেতৃত্ববৃন্দ ও সংগঠনের সদস্যরা। এই শ্রদ্ধা নিবেদন পর্বের পর একটি জনসভার আয়োজন করা হয়, যেখানে বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে উপস্থিত নেতৃত্বরা তপন চক্রবর্তীর আত্মত্যাগের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন। তাঁরা বলেন, তৎকালীন সময়ে জাতি ও উপজাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছিল এবং এক ভয়াবহ জাতিদাঙ্গা পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। সেই কঠিন সময়ে তপন চক্রবর্তী জাতি ও উপজাতির মধ্যে মৈত্রীর বন্ধনকে সুদৃঢ় করতে এবং শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছিলেন। শান্তিনগরে আয়োজিত শান্তি সভা থেকে ফেরার পথেই তিনি আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। তাঁর এই আত্মদান জাতিগত বিভেদের বিরুদ্ধে এক বলিষ্ঠ প্রতিবাদ ছিল এবং সেদিন থেকেই সমগ্র রাজ্যে এই নিহত যুবনেতা তপন চক্রবর্তীর শহীদান দিবস পালন করা হচ্ছে, যা আজও জাতিগত সম্প্রীতি ও শান্তির এক অদম্য প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। তাঁর স্মৃতি ও আদর্শ আজও লক্ষ লক্ষ যুব কর্মীকে প্রেরণা যোগায়।








