
তেলিয়ামুড়া, ত্রিপুরা, ১৪ মার্চ ২০২৫ঃ শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং প্রতিভা দিয়ে সমাজে বিশেষ স্থান দখল করেছেন উত্তম লোধ। জন্মগ্রহণের পর থেকেই পিতৃ-মাতৃহীন এই প্রতিবন্ধী শিল্পী, যিনি জন্মের পর চোখে দেখতে না পাওয়ার কারণে মাতা-পিতা তাকে ত্যাগ করেন। তবে, এক নার্সের অসীম ভালোবাসা ও সহযোগিতায় তিনি বড় হন এবং পরবর্তীতে নরসিংগড়ের অন্ধ স্কুলে ভর্তি হন, যেখানে তিনি শুধু পড়াশোনা নয়, গান-বাজনায়ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
বিগত ১৪-১৫ বছর ধরে বিভিন্ন মেলা, অনুষ্ঠান বা রাস্তার পাশে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে নিজের মধুর কণ্ঠে গান গেয়ে উত্তম লোধ মনোরঞ্জন করেছেন হাজার হাজার মানুষকে। মানুষদের থেকে উপার্জিত সামান্য অর্থে, তিনি আগরতলার রাধানগর এলাকায় বাস করছেন, যদিও তার জন্ম সিপাহীজলা জেলার বিশালগড়ে। প্রতিবন্ধী এই শিল্পী জানান, তার সঙ্গীতের মাধ্যমে যে অর্থ তিনি উপার্জন করেন, তা দিয়েই তার সংসার চলে।
তেলিয়ামুড়ার এক মেলায় রাস্তার পাশে গান গেয়ে মানুষদের মনোরঞ্জন দেওয়ার সময়, সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে উত্তম বাবু তার জীবনের সংগ্রাম এবং তার সফলতা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি জানান, “জন্মের পর থেকে আমি পিতৃ-মাতৃহীন ছিলাম। তবে, এক নার্স আমাকে বড় করেছেন এবং তার সহযোগিতাতেই আমি অন্ধ স্কুলে ভর্তি হতে পেরেছিলাম।” তিনি আরও বলেন, “আজ আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, তা শুধুমাত্র নিজের ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে।”
উত্তম লোধ বলেন, “যতটা সম্ভব, আমি মানুষের কাছে সহযোগিতা পেয়েছি। এই সহযোগিতার মাধ্যমে আমি বেঁচে আছি।” তবে, তিনি সমাজের প্রতি এক বার্তাও দিয়েছেন, বিশেষ করে সেই সকল পিতামাতাদের প্রতি, যারা সন্তান প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে তাদের ত্যাগ করেন। তিনি বিশ্বাস করেন, এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়া সন্তানদের জন্য তিনি একটি শক্তিশালী উদাহরণ।
অন্যদিকে, বিভিন্ন শুভবুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তিরা মনে করছেন, সরকারের পক্ষ থেকে যদি প্রতিবন্ধী শিল্পী উত্তম লোধের মতো প্রতিভাবানদের সহায়তা দেওয়া হয়, তাহলে ভবিষ্যতে তাদের জীবন আরো সুন্দর হতে পারে এবং তারা আরো সফল হতে সক্ষম হবেন।
উত্তম লোধের সংগ্রামী জীবন আমাদের শেখায়, জীবনে কোনো প্রতিবন্ধকতা কোনো দিনই আমাদের স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, যদি আমাদের ইচ্ছাশক্তি শক্তিশালী থাকে।